ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

এসেছে শুভ্রতায় মোড়ানো শরৎ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এসেছে শুভ্রতায় মোড়ানো শরৎ ছবি: নাজমুল হোসেন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে/ এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে...। - প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি।

বিশেষ করে শরতের শিউলি তাকে মুগ্ধ করেছিল। সে মুগ্ধতার কথা জানিয়েই তিনি লিখেছিলেন এ কবিতা।

মুগ্ধতার সে শরৎ শুভ্রতায় মুড়ে এসেছে প্রকৃতিতে। আজ ১ ভাদ্র রোববার প্রিয় ঋতু শরতের প্রথম দিন। বাংলা ঋতু অনুসারে ভাদ্র-আশ্বিন মাস জুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। বর্ষার বিদায়ে প্রকৃতি এ সময় মহাকবি কালিদাসের ভাষায়, ‘নববধূর’ সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। ঋতুপরিক্রমায় এখন ফুটবে শরতের সিগ্ধ ও প্রশান্ত রূপ। প্রতিটি ভোর আসবে ঝরে পড়া শিউলির সৌন্দর্য গায়ে মেখে। পৃথিবীর বুকে এক অনাবিল আনন্দের ঝর্ণাধারা ছড়িয়ে দেয় এই ঋতু। শরতের নিজস্বতা মিশে রয়েছে কাশফুলের সঙ্গে।

এ ছাড়া গাছে গাছে ফুটতে শুরু করে ছাতিম, বরই, দোলনচাঁপা, বেলি, শিউলি, শাপলা, জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জুরি, শ্বেতকাঞ্চন, মল্লিকা, মাধবী, কামিনী, নয়নতারা, ধুতরা, কল্কে, স্থল পদ্ম, সন্ধ্যামণি, ঝিঙে, জয়ন্তীসহ নাম না জানা আরও নানা জাতের ফুল।

ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চ এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই এদেশের প্রকৃতিকে আপন সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে থাকে। ফলে প্রকৃতি কখনো হয় প্রাণোচ্ছ্বলা চঞ্চলা তরুণী, কখনো হয় দীপ্ত চক্ষু শীর্ণ সন্নাসিনী, কখনো বর্ষশীলা ক্রন্দনরতা অভিমানিনী, কখনো নিষ্প্রভ জরাগ্রস্ত বৃদ্ধা আবার কখনো বা শান্তশিষ্ট স্নেহময়ী জননী। ঋতুচক্রের বর্ষ পরিক্রমায় শরতের আগমন ঘটে বর্ষার পরেই। বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে শরৎ আসে শান্ত সিগ্ধ কোমল রূপ নিয়ে, যেখানে নেই কোনো মলিনতা, আছে কেবল নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে।

বাংলাসাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎ নিয়ে প্রচুর কবিতা-গান রচনার মধ্যদিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ ও সুবাসিত করেছেন। তিনি বলেছেন- শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/  ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি। /শরৎ তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে/বনের-পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে/ আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পদ্মায় বোটে ভ্রমণকালে শরতের ময়ূরকণ্ঠী নীল নির্মল আকাশে শিমুল তুলার মতো শুভ্র মেঘেদের দলবেঁধে  ছুটে বেড়ানো দেখে লিখেছিলেন -অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য শরৎ পংক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা/নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা, ওগো শেফালি বনের মনের কামনা, সকল বন আকুল করে শুভ্র শেফালিকা, আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, শিউলি সুরভিত রাতে বিকশিত জ্যোৎস্নাতে, শরৎ প্রাতের প্রথম শিশির প্রথম শিউলি ফুলে, হৃদয় কুঞ্জবনে মঞ্জুরিল মধুর শেফালিকা।

শরতের মন মাতানো প্রকৃতিতে মন কী যে খুঁজে ফেরে, তা বোঝা বড়ই মুশকিল! প্রকৃতির মতো রোদ-বৃষ্টির দোদুল্যমানতায় মনের মধ্যেও যেন অভিমানের মেঘ জমে। আবার কখনও হয়ে ওঠে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন শরতকে দেখেছেন ‘বিরহী নারী’ হিসেবে।

তিনি বলেন-গণিতে গণিতে শ্রাবণ কাটিল, আসিল ভাদ্র মাস/বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস। /আজকে আসিবে কালকে আসিবে, হায় নিদারুণ আশা/ ভোরের পাখির মতন শুধুই ভোরে ছেয়ে যায় বাসা।

গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ এসেছে সাড়ম্বরে। কিন্তু ইট-কাঠের এই নগরে শরৎ কোথায়? শহুরে জীবনে শরৎ ঋতু থেকে যায় অন্তরালেই। শরতের এই রূপবৈচিত্র শহরে যেন অনেকটাই অনুপস্থিত। হবেই না কেন, ইট-কংক্রিটের জঙ্গলে সে তো বেমানান। শরৎ উপভোগ করতে হলে, তাকে দেখতে, জানতে ও অনুভব করতে হলে যেতে হবে মাটির কাছাকাছি, নদীর কাছাকাছি। কেননা সেখানেই যে সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে সংসার পাতে নির্মল শরৎ!

বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এমআরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।