ঢাকা, বুধবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

মানুষের মতো মৌমাছিও আসক্ত হয়!

শামীমা নাসরিন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
মানুষের মতো মৌমাছিও আসক্ত হয়!

ঢাকা: মানুষ যেভাবে সিগারেট বা মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, একইভাবে মৌমাছিরাও আসক্ত হয়।

সম্প্রতি একটি জার্নালে প্রকাশিত নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটি ও ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের একদল গবেষক তাদের ধারাবাহিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনই ‍অবাক করা তথ্য জানিয়েছেন।



তাদের মতে, মানুষ যেমন নিকোটিনে আসক্ত হয়, মৌমাছি বা ভ্রমরও তেমনই নিকোটিনে আসক্ত হয়। এরা মধুর সঙ্গে থাকা ‘নিওনিবোটিনাইড’ (নিকোটিনের মতো এ ধরনের কীটনাশক) বেশি পছন্দ করে। নিওনিকোটিনাইড পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষা কর‍ার জন্য ব্যবহার করার ফলে মৌমাছিরাও এতে আসক্ত হয়ে পড়ে।

গবেষণায় দেখা যায়, মৌমাছিরা কীটনাশকের স্বাদ নিতে পারে না তবে নমুনা সক্রিয়ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে। তাদের মস্তিষ্কে কীটনাশকের প্রভাবেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মৌমাছিরা। ধূমপায়ীদের মতো এরাও বারবার নিওনিকোটিনাইড গ্রহণ করতে চায়।

গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পরে নিওনিকোটিনাইড ব্যবহার স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা উচি‍ৎ কি-না এ নিয়েও অলোচনা করেন পরিবেশবাদীরা।

সংরক্ষণবাদীদের ‍যুক্তি, মৌমাছির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসার পেছনে এ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থও দায়ী।

এর আগে ইউরোপে তিনবার অস্থায়ী ও আংশিক নিষিদ্ধ করা হয় এই কীটনাশক। তবে ওই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর শেষ নাগাদ।

কৃষকদের মতে, কীটনাশক ছাড়া চাষ করলে উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষত রবি শষ্য।

তবে ‘গ্রিন গ্রুপস’ ও বিজ্ঞানীর‍া স্থায়ীভাবে এটাকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে অন্যান্য নিওনিকোটিনাইড কীটনাশকও-এর আধীনে আনার আহ্বান জানান তারা।

নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গেরাল্ডিন রাইট তার এক গবেষণায় বলেছেন, মৌমাছিরা তাদের খাবারের মধ্যে আলাদা করে নিওনিকোটিনাইডের স্বাদ বুঝতে পারে না। তাই সচেতনভাবে এটা বর্জনও করতে পারে না। যখন তারা এ বিষযুক্ত মধু পান করে তখন তারা নেশাগ্রস্ত হয়, কখনও কখনও বিষক্রিয়াতেও আক্রান্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, মৌমাছিরা কীটনাশক ও দূষিত খাবারের প্রতি বেশি আসক্ত হয়। এ বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণও রয়েছে। মানুষের মস্তিষ্ক যেমন নিকোটিনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়, একইভাবে মৌমাছিরাও নিওনিকোটিনাইডের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়।

এটা খুবই দ্রুত কাজ করে, ফলে রক্তে মিশে যাওয়া মাত্রই তারা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং অতিমাত্রায় ভোঁ ভোঁ করতে থাকে, বলেন তিনি।

তবে ভিন্ন একটি গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিওনিকোটিনাইড মৌমাছিদের বংশ বিস্তার ও কৃষি পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’র কর্মী স্যানড্রা বেল জানান,  কৃষি খামার বা বাগানে এই কীটনাশক ব্যবহার করা মোটেও উচিৎ না। মৌমাছির বংশ বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে এমন বিষয়ের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন সাসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড গুলসন। তিনি বলেন, ফসল বাঁচাতে কৃষি জমিতে নিওনিকোটিনাইড ব্যবহার করা হলেও তা মৌমাছিদের জন্য ক্ষতিকর ন‍া।

এদিকে হার্প এনডেনের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোথামস্টেড রিসার্চের জৈব রসায়ন ও শষ্য সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক লিন ফিল্ড বলেন, এ বিষয়ে দুটি গবেষণা এখনও চলছে। নিওনিকোটিনাইড বিতর্ক নিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়নি। আরও তথ্য পাওয়ার পর বলা যাবে নিওনিকোটিনাইডের ঝুঁকি কতটা।

বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।