ঢাকা, রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কেন তারা বাংলাদেশে আসে!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪
কেন তারা বাংলাদেশে আসে! ছবি: তানিয়া খান

শ্রীমঙ্গল: শুরুতেই বলি, ‘অতিথি পাখি’ নয়; সঠিক শব্দটি হবে ‘পরিযায়ী পাখি’। ইংরেজিতে মাইগ্রেটরি বার্ড।

আমরা ‘অতিথি পাখি’ নামক ভুল শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার করতে করতে এ শব্দটিকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছি। জেনেশুনে ভুল শব্দ ব্যবহারের বিপরীতে আমাদের এখন আরও সচেতন হবার সবার সময় এসেছে।

এসব পরিযায়ী পাখিরা তাহলে কেন প্রতিবছর আমাদের দেশে আসে? কিছুদিন আমাদের দেশের আলো-বাতাস-পানিতে কাটিয়ে কেনই বা আবার ফিরে যায়? কেনই বা তাদের হঠাৎ হঠাৎ মারা পড়তে হয় আমাদের দেশের অসাধু-লোভী শিকারীদের হাতে!

বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক, লেখক এবং দুবাই চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী ও চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান বাংলানিউজকে বলেন, অতিথি পাখি শব্দটি কখনোই সঠিক নয়। এ শব্দটি হবে পরিযায়ী পাখি। অর্থাৎ যারা ‘‌পরিযায়ন’ করে থাকে।

উত্তরের অঞ্চলগুলো যখন বরফপূর্ণ হয়ে যায় তখন তারা দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে চলে আসে। দক্ষিণের সীমানার মধ্যেই আমরা পড়ি। আমাদের এখানে তো হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা নেই এবং বরফও পড়ে না। তাই খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ীরা আমাদের দেশ বা দক্ষিণের দিকে চলে আসে।

ড. রেজা খান বলেন, পরিযায়ী পাখিরা বিভিন্নভাবে আসে। কোনো প্রজাতির পাখিরা একটানা চলে আসে। দু’হাজার, পাঁচহাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে চলে আসে এরা।

আবার কোনো কোনো প্রজাতির পাখিরা দৈনিক একশ, দুইশ কিলোমিটার করে থেমে থেমে আসে। সাধারণত ছোট পাখিরা এভাবে থেমে থেমে আসে। বিভিন্ন গ্রুপের পাখিরা বিভিন্নভাবে পথ অতিক্রম করে আসে।

কিন্তু তাদের এ পথচলার মোটামুটিভাবে একটি নির্দিষ্ট রাস্তা রয়েছে। সারা আকাশ খালি দেখি আমরা; কিন্তু বিমান চলাচলেরও একটি সুনির্দিষ্ট ও বৈধ পথ রয়েছে। পাখিদের বেলায়ও তেমন। পাখিরা প্রাকৃতিকভাবে কিছু রাস্তা তৈরি করে নিয়েছে। এ পথটিই তারা যুগ যুগ ধরে রপ্ত করে ফেলেছে।

ড. রেজা খান আরও বলেন, বড় পরিযায়ী পাখিগুলো চোখে দেখা যায়; কিন্তু ছোট পরিযায়ীগুলো তেমন চোখে পড়ে না। কিছু পাখি আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আসে। কিছু পাখি আবার মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে আসে। ওগুলো ক্ষুদ্র বলে তেমন একটা চোখে পড়ে না; কেউ খেয়াল রাখে না।

এর মধ্যে সরালি কিন্তু আমাদের দেশের পাখি। প্রাকৃতিক বিল-হাওর-জলাশয়গুলো নানা ধরনের বিপর্যয়ের ফলে ওরা এখন পাশের দেশে চলে যায়। আবার শীত মৌসুমে আমাদের দেশে ফিরে আসে। সারাদিন ওরা বাইক্কা বিলে থেকে রাতে ওরা ধানক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।

ড. রেজা খান পাখির সংখ্যা সম্পর্কে বলেন, সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তার অর্ধেকই পরিযায়ী। অর্থাৎ ৩শ’ ৫০টি প্রজাতির মধ্যে প্রায় আড়াইশ পাখিই আসে শীত মৌসুমে এবং নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে আবার চলে যায়। অবশিষ্ট ১শ’টি প্রজাতি হলো গ্রীষ্মের পরিযায়ী পাখি।

অর্থাৎ তারা শরতে ও বসন্তে আসে। আমাদের মতো সমতল দেশের হাওর-জলাশয়, বিস্তৃর্ণ অঞ্চল বা বনভূমি বেষ্টিত পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে পরিযায়ীরা আসা-যাওয়া করে। ওইসব অঞ্চলে ছোট বাজ জাতীয় শিকারী পাখির সংখ্যা কম থাকায় পরিযায়ীদের বিচরণ অনেকটাই সহজ ও সফল হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।