ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিলুপ্তির পথে বনকলাসহ চুনতির প্রাণবৈচিত্র্য

মোকারম হোসেন, ন্যাচার অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪
বিলুপ্তির পথে বনকলাসহ চুনতির প্রাণবৈচিত্র্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চুনতি অভয়ারণ্য (কক্সবাজার) থেকে ফিরে: বন বিভাগের নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের নির্দেশিকায় চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যের কিছু উল্লেখযোগ্য বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণির ছবি মুদ্রিত হয়েছে। তাতে সবুজ কোকিল, শ্যামা, টুনটুনি, হাতি, বনকলা, ট্রি-ফার্ন প্রভৃতি অন্যতম।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে উল্লিখিত এসব জীব-জন্তু ও গাছপালা এখন মূলত বইপত্র এবং নির্দেশিকায় স্থায়ীভাবেই স্থান করে নিতে যাচ্ছে।

এখন আর স্বাভাবিকভাবে বনের ভেতর এসব প্রাণবৈচিত্র্যর দেখা মিলছে না। চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ঘুরে পুরনো আশ্রয়গুলোতে কোনো ট্রি-ফার্ন বা বনকলার দেখা মেলেনি। দেখা যায়নি কোনো ধরনের অর্কিডও। তবে বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান বনের একেবারে গহিন এলাকায় অল্প কিছু ট্রি-ফার্ন বেঁচে আছে বলে মনে করেন।

তিনি ২০০৭ সালের দিকে সেখান থেকে ট্রি-ফার্ন ও বনকলার ছবি সংগ্রহ করেছেন।  

অথচ নির্দেশিকার তথ্যমতে, একসময় চুনতি বনে এসব প্রাণবৈচিত্র্য বেশ ভালোভাবেই ছিলো। বনের নিজস্ব গাছপালার মধ্যে অনেক প্রজাতিই এখন আর দেখা যায় না। তার মধ্যে বাইট্টা গর্জন, চিকরাশি, বর্তা, ছোট হরিণা, গামারি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

বন পর্যবেক্ষকদের মতে, চুনতি বনের ট্রিÑফার্ন, বনকলা ও ফক্সটেইল অর্কিড এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছরে এসব উদ্ভিদ বনের স্বাভাবিক ঘনত্বের ভেতর দেখা যায় নি।

বনের মান নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত ৬ ধরনের পাখিÑ ভিমরাজ, সাদা-ঝুটি পাঙ্গা, ফোঁটাকন্ঠী সাতভায়লা, শ্যামা, পাহাড়ি ময়না ও বনমোরগ পাখিও চুনতি বনের বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। একসময় হাতির জন্য এই বন বিখ্যাত থাকলেও এখন শীত মৌসুমেও হাতি আসে অনিয়মিতভাবে।

চুনতি বনে একসময় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালার মধ্যে বাইট্টা গর্জন, তেলিয়া গর্জন, ধুলিয়া গর্জন, চাপালিশ, বাঁশ, বেত, ফার্ন এবং বনকলা অন্যতম ছিল। এখন শুধু বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গর্জন, ২-৪ বছর বয়সী কিছু বেত, হাতেগোনা কয়েকটি চাপালিশ, দু’একটি ছোট হরিণার দেখা মেলে। পুরনো গাছ খুব একটা না থাকায় অর্কিডও প্রায় বিলুপ্ত।

বনের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে একটি মাত্র ছোট হরিণার গাছ দেখা গেছে। বনতলের লতাগুল্মও নেই বললেই চলে। অনেক আগেই চোরা শিকারি ও স্থানীয় মানুষ এসব সাফসুতরো করে ফেলেছে। পুরনো হিসাব মতে, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বনের সেই সব পুরনো গর্জন, চাপালিশ, বাঁশ ও বেত ঝোপগুলো গেল কোথায়? চুনতি অভয়ারণ্যের ক্ষেত্রে এটি এখন একটি বিরাট প্রশ্ন।  

চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য মূলত ক্রান্তীয় মিশ্র চিরসবুজ বনের অংশ। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিমি দক্ষিণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে লোহাগড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে চুনতির অবস্থান। অভয়ারণ্যটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লোহাগড়া এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চুনতি, অধুনগর, হারবং, পুইছড়ি, বাঁশখালী, বড়হাতিয়া ও টইটং এলাকা নিয়ে গঠিত।

১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে এই অভয়রণ্যটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার আগে এই বন চুনতি রিজার্ভ বনভূমি নামেই পরিচিত ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।