ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিষখেকো ইঁদুর!

পরিবেশ-জীববৈচিত্র ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
বিষখেকো ইঁদুর!

ঢাকা: আমাদের চারপাশে থাকা প্রাণীদের মধ্যে খুবই পরিচিত একটি হলো ইঁদুর। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা খেয়ে এরা জীবনধারণ করে।

কিন্তু ইঁদুর বিষাক্ত খাবার খেয়ে জীবনধারণ করে এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়।

নির্দিষ্ট মাত্রার বিষ হজম করার ক্ষমতা প্রতিটি প্রাণীরই থাকে। ঠিক তেমন ইঁদুরও তাদের মাত্রা অনুযায়ী আবর্জনা খেয়ে থাকে। তবে বিষ খায় এমন ইঁদুরও রয়েছে! এরা প্রতিদিন বিষই খায়, বলা যায় বিষখোর ইঁদুর।

বলছি যুক্তরাষ্ট্রের মোহাভি মরুভূমির কাঠইঁদুরের কথা।

প্রতিদিনই এরা মারাত্মক বিষাক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরায়। মরুভূমির ঝোঁপ-ঝাড়, নিম্নভূমিতে জন্মানো গুল্ম, যেগুলোর পাতায় বিষ রয়েছে এমন খাবারই থাকে এদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়।

রসায়ন তত্ত্বে দেখা গেছে উদ্ভিদের এই বিষগুলো শতাধিক কেমিকেলের সংমিশ্রণ। এর মধ্যে প্রধান হলো নরডিহাইড্রোগুয়ারেটিক এসিড (এনডিজিএ)। এটি এমন একটি কেমিকেল যা একটি সাধারণ ইঁদুরের লিভার ও কিডনি ধ্বংস করে দিতে পারে।

কিন্তু কাঠইঁদুরের কাছে এটা যেন কোনো বিষয়ই না। প্রতিদিন এরা যে পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহণ করে তা যেকোনো সাধারণ ইঁদুরের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক কেভিন কোল যখন কাঠইঁদুর নিয়ে গবেষণা করছিলেন তখন অবাক হন। তার মনে হয় ইঁদুরের পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিষাক্ত খাবার হজমে অসুবিধা হয় না।

ব্যাকটেরিয়া এমন এক ধরনের অণুজীব যা অপরিশোধিত তেল থেকে শুরু করে ইউরেনিয়াম পর্যন্ত সবই হজম করতে পারে এবং প্রতিটি স্তন্যপায়ী জীবের পাকস্থলীতেই এক ট্রিলিয়নের বেশি অণুজীব থাকে।

এটা প্রমাণিত এদের মধ্যে কিছু অণুজীব রয়েছে যারা তৃণভোজী প্রাণীর খাবার গ্রহণের পর পুষ্টি ও বিষ আলাদা করে ফেলে। কোল এটি পরীক্ষা করেন।

প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষাক্ত গুল্ম মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। আরো বিস্তার লাভ করে যখন এটি মোহাভি মরুভূমিতে আসে, তখন কাঠইঁদুর এগুলো খেতে শুরু করে।

কিন্তু উত্তরের মরুভূমিতে এই বিষাক্ত গুল্ম জন্মায় না বলে সেখানে থাকা কাঠইঁদুর এর সঙ্গে অভ্যস্ত নয়।

কোল তার ল্যাবে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখেন, গ্রেট বেসিন অঞ্চলের অন্যান্য ইঁদুরের তুলনায় মোহাভি অঞ্চলের ইঁদুরের পাকস্থলীতে অণুজীবের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণেই তারা বিষাক্ত খাবার খেয়েও হজম করতে পারে। অন্যদিকে স্থানীয় ইঁদুর তা পারে না।

ব্যাকটেরিয়াই বিষাক্ত খাবার হজমের মূলে কি না তা প্রমাণ করতে কোল কাঠইঁদুরের পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়াদের অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে হত্যা করে ফেলে। পরবর্তীতে দেখা যায় ইঁদুরগুলো ল্যাবে সাধারণ খাবার খেতে শুরু করেছে।

ওদের আবার বিষাক্ত গুল্ম খাওয়ানো হলে সেটা সহ্য করতে পারে না ইঁদুরগুলো এবং আশঙ্কজনক হারে তাদের ওজন কমতে থাকে।

দুই সপ্তাহে শতকরা ১০ ভাগ ওজন কমে যায় ইঁদুরগুলোর। ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার পরে দেখা যায়, তারা সামান্য মাত্রার বিষও হজম করতে পারে না যা ওই অঞ্চলের সাধারণ ইঁদুরই পারে।

এবার কৃত্রিমভাবে সাধারণ কাঠইঁদুরের শরীরেই ওই জাতীয় ব্যাকটেরিয়া প্রতিস্থাপন করানো হয় এবং তাদের আচরণেও পার্থক্য আসে। প্রথমেই এই ইঁদুরের প্রস্রাবের রং পাল্টে যায় এবং শরীরে কালচে ছাপ আসে। তবে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় এরা স্বগোত্রীয় ইঁদুরের চেয়ে বেশি দিন বাঁচবে।

প্রায় ৪০ বছর আগে পরিবেশবিদ ডব্লিউ. জে. ফ্রিল্যান্ড এবং ডানেল যানজেন তাদের গবেষণা থেকে অনুমান (হাইপোথিসিস) করেন তৃণভোজী প্রাণীদের পাকস্থলীতে থাকা ব্যাক্টেরিয়া উদ্ভিদের পুষ্টি এবং বিষ আলাদা করতে সক্ষম।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।