ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

আহত পাখির প্রতি ভালোবাসা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৪
আহত পাখির প্রতি ভালোবাসা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: শৈশবে অনেকেরই পাখির প্রতি তীব্র আকর্ষণ থাকে। থাকে কোনো পাখিকে ছুঁয়ে দেখার গভীর ইচ্ছা।

গাছে উঠে পাখির বাচ্চা চুরি করা, ছোট গাছ থেকে অন্ধকারে পাখি ধরা, ঢিল বা গুলতি দিয়ে পাখিকে আঘাত করা–এরকম কত না ঘটনা আমাদের অনেকেরই রয়েছে শিশুকালের স্মৃতিতে!

সেরকমই একটি ঘটনার কথা বলি। শুক্রবার গুলতি দিয়ে একটি বেগুনিকোমর মৌটুসি (Purple-rumped Sunbird) পাখিকে আহত করে স্থানীয় তিন শিশু। পাখিটিকে আহত করা পর তারা ভোগে তীব্র লজ্জা ও অনুশোচনায়। পাখিটিকে তারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করে। হৃদয় জাগে পাখির প্রতি ভালোবাসা। যে সুন্দর পাখিটিকে তারা গুলতি দিয়ে মেরে মাটিতে ফেলেছিল, কাউন্সিলিঙের পর পাখিটিকে বাঁচানোর জন্য ওরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

ঘটনাটি ঘটেছে মংলার মাকড় ঢোন এলাকায়।

একাত্তর টেলিভিশনের বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হোসেন সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে বালকদের সঙ্গে হঠাৎই দেখা হয়ে গেল। দেখলাম কিছুক্ষণ আগে তিন শিশু একটি পাখিটিকে গুলতি দিয়ে মেরেছে। পাখিটি লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে।
এ অবস্থা দেখে আমি ওদের বলি, বাবা! তোমরা এটা কী করেছ? একথাতে ওরা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল। ওরা পাখিটিকে তখন হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার কথাও বলতে লাগল।
Srimangal_Bird
হাসপাতাল নিয়ে যাবার কথাটা শুনেই পরই ওদের প্রতি আমাদের সম্মান আরো বেড়ে গেল। আমি তখন তাদের বলি, এখানে তো পাখির জন্য কোনো আলাদা হাসপাতাল নেই। ওরা ভীষণভাবে অনুশোচনায় ভুগতে থাকল। তারপর পাখি মারার বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কাউন্সিলিং করি। অন্যরাও পঁচিশ-ত্রিশ জন এসে এই কাউন্সিলিংয়ে যোগ দেয়।

বন্যপ্রাণি গবেষক ড. আনিসুজ্জামান খাঁন স্যারও সেই কাউন্সিলিংয়ে অংশ নিয়ে প্রকৃতির জন্য পাখি প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরেন।  

হোসেন সোহেল আরো বলেন, পাখিটির বুকে আঘাত লেগেছে শুনে পাশের বাড়ির মাসিরা হলুদ নিয়ে এসে পাখিটির বুকে লাগিয়ে দিলেন। এত্তো ভালো লাগলো বিষয়টি! না দেখলো বোঝা যাবে না!

তারপর এক মাসি বললেন, পাখিটাকে আমি আমার কাছে রাখি? ওরা সেবা-যত্ন করবে। পরে ওই পাখিটিকে ওনার কাছে দিয়ে দেওয়া হলো। কাউন্সিলিংয়ের পর সেই শিশুরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের।

আজ সকালে খোঁজ নিলাম, পাখিটি চোখ মেলে তাকাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।