ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

তাজামাছে জুড়ায় প্রাণ

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪
তাজামাছে জুড়ায় প্রাণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টফোর.কম

ঢাকা: বিশাল আকৃতির অ্যাকুরিয়ামে লাফালাফি করছে বিভিন্ন প্রজাতির তরতাজা মাছ। প্রমাণ আকৃতির রুই, কাতলা, চিতল, মৃগেল, নলা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কার্ফু কী নেই সেখানে।

স্বচ্ছ কাচের সেই অ্যাকুরিয়ামে দেখিয়ে দেয়া মাত্রই কাঙ্খিত মাছ তুলে এনে দ্রুততম সময়ে ওজন করে ভরে দেয়া হচ্ছে বাজারের থলেতে। পুকুর থেকে তুলে আনার কিছু সময়ের মধ্যেই মাছ কেনার এই অভিজ্ঞতা ক’জনার হয়! ফরমালিনের এই যুগে বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হলেও তা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন সাভারের এক উদ্যোক্তা।

উন্নত দেশের আদলে মাছপ্রিয় বাঙালির পাতে তাজামাছের স্বাদ তুলে দিতে ভিন্ন এক উদ্যোগ নিয়েছেন সাভারের এস এম ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী ও উদ্যোক্তা বোরহান উদ্দিন মিষ্টু। শুক্রবার সকালে সাভারের অভিজাত এলাকা ব্যাংক টাউন এলাকায় এ উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও রাজধানীমুখো তাজামাছপ্রেমীরা কিনতে পারবেন বাজার মূল্যেই তরতাজা সব মাছ।

সকালে এস এম ফিশারিজ আয়োজিত তাজামাছ বিক্রির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান। উদ্বোধনের সূচনাতেই এ উদ্যোগ সাড়া ফেলে সাভারে। মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় সাড়ে তিনশ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির তাজামাছ। ৫ ফুট উচ্চতার ১৪ ফুট বাই ৬ ফুটের চৌবাচ্চায় বিশাল আকৃতির জীবন্ত মাছের এ সমাহার দেখে শিশুরাও দারুন খুশি।

সরাসরি ভোক্তাদের হাতে তাজামাছ তুলে দেওয়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ধামরাইতে আমার মাছের খামার আছে। তবে সেখান থেকে মাছ সাভারে আনতে আনতে তরতাজা মাছের স্বাদ আর থাকে না।
Fish_3
তিনি জানান, আমার উৎসাহে বোরহান উদ্দিন মিষ্টু যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে তার বিপুল সাড়া দেখে আমি আনন্দিত।

সেখান থেকে সাড়ে আট কেজি রুই, কাতলা আর চিতল মাছ কিনতে দেখা যায় এই সাংসদকে। তিনি আশা করেন, শিগগির এখানে তাজা পুটি, কৈ, মাগুর, পাবদা, কালিবাউস মাছের স্বাদও পাওয়া যাবে।

উদ্যোগ প্রসঙ্গে বোরহান উদ্দিন মিষ্টু বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে বরফ দেওয়া মাছের মূল্যেই বিক্রি হবে তরতাজা মাছ। মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা সবসময়েই থাকে ফরমালিন আতঙ্কে। অভিজাত সুপার শপগুলোও মুক্ত নয় বিষাক্ত এই ফরমালিন থেকে। উন্নত দেশগুলোতে ঘুরে দেখেছি, বাজারে তাজামাছ বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও দেখেছি তাজামাছ প্রদর্শিত হতে।

‘খামার থেকে মাছ তুলে তা আড়ত পর্যন্ত পরিবহন, সেখানে বিক্রির জন্যে অপেক্ষা, তারপর মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে বাজারে খুচরা পর্যায়ে সেই মাছ পৌঁছাতে মাছের আর প্রাণ থাকে না। আমি চেয়েছি গ্রাহক তাজামাছ দেখবে। তরতাজা মাছের মধ্যে বাছাই করবে তার প্রিয় মাছ। অনেকটা যেন খামার থেকেই তুলে দেবার মতো। ’

সকালে ব্যাংক টাউনে গিয়ে দেখা যায় তাজামাছ কেনার জন্যে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য মানুষ। আনুষ্ঠানিকতার জন্যে অপেক্ষা করতে বলায় যেন তর সইছিলো না অনেকের। পাছে পছন্দের মাছটি বিক্রি হয়ে যায় এই ভয়ে।
Fish_2
বোরহান উদ্দিন মিষ্টু জানান, কেবলমাত্র লাভের কথা চিন্তা না করে আমি চেয়েছি কিভাবে সহনীয় মূল্যে ভোক্তাদের হাতে তাজামাছ তুলে দেওয়া যায়। প্রায় ছয় মাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শুরু হলো, জনগণের বিপুল সাড়া দেখে বেশ ভালো লাগছে।

তিনি জানান, এটা পাইলট প্রকল্প। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে অ্যাকুইরিয়াম স্থাপন করে এভাবে মাছ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য খামারিদের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। তাদের বলেছি, মাছকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে। গুণগত মান ঠিক রেখেই ভিন্ন খামারের মাছ এখানে রাখা হবে।

সাভার বাজার রোড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান অভি বাংলানিউজকে জানান, তাজামাছ কিনে আমি যতটা না খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি আমার দুই কন্যা। মাছগুলো যেভাবে লাফালাফি করছে, দেখে মনে হচ্ছে বাসা পর্যন্ত এভাবেই থাকবে।

স্থানীয় বাজারে বিক্রি মরা মাছের সঙ্গে তাজামাছের মূল্যের ও কোন তারতম্য পাওয়া গেলো না এখানে।

সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে মাছের বাজারে যে দেশি রুই তিনশ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে, একই মূল্যে এখানে পাওয়া গেলো তাজামাছ।

কীভাবে এটা সম্ভব- এ প্রশ্নের জবাবে রোবহান উদ্দিন মিষ্টু বলেন, নানা হাত ঘুরে মাছ বাজারে যায়। সেখানে সংরক্ষণের জন্যে কেউ বরফ, কেউবা ফরমালিন দেয়।

আমরা নিজেদের পুকুর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় সরাসরি মাছ নিয়ে আসছি। পরিবহন খরচ বাদে বাড়তি কোনো খরচ আমাদের নেই, নেই মধ্যস্বত্বভোগী। ফলে দামের সুবিধাটা ভোক্তা সরাসরি পাচ্ছেন।
Fish_4
তিনি জানান, তার খামারের মাছ স্বাদেও ভিন্ন। কারণ, তিনি মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন সুষম খাদ্য।

বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে মিরপুর থেকে মাছ কিনতে এসেছেন শিল্পপতি আলহাজ মোহাম্মদ হোসেন খান।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, মাছে-ভাতে বাঙালির মাছের প্রতি একটু কদর বেশিই। তরতাজা মাছের স্বাদই আলাদা। এ স্বাদ নিতে কার না ইচ্ছে হয়। ফরমালিনের কারণে তাজামাছের স্বাদ প্রায় ভুলতে বসেছে দেশের মানুষ। এ উদ্যোগ তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে তাজামাছের সোনালী দিনগুলোতে।

সাভার প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাভেদ মোস্তফা জানান, এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ফরমালিনের বিরুদ্ধে এ উদ্যোগ বিপ্লব ঘটাবে।

এস এম ফিশারিজের পরিচালক এ কে এম আহসান উদ্দিন জানান, বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখেই মূল্য নির্ধারণ করা হবে। শুক্রবার কেজিপ্রতি তিন থেকে চারশ টাকায় রুই, কাতলা আর চিতল বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায়।

তিনি জানান, চৌবাচ্চায় মাছকে তাজা রাখতে পানিতে অনবরত কম্পন সৃষ্টি করা হয়। এজন্যে নিয়োজিত আছেন দু’জন কর্মচারী।

বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।