ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

আলতাদীঘির অজগর নিয়ে বিভ্রান্তি!

শফিক ছোটন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৪
আলতাদীঘির অজগর নিয়ে বিভ্রান্তি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নওগাঁ: খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এসে আটক হওয়া অজগরটি আলতাদীঘি শালবনে ছেড়ে দেওয়া হবে কি হবে না এনিয়ে কোনো সিন্ধান্তে পৌঁছানো আগেই শুরু হয়েছে নতুন বিভ্রান্তি! বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এ বনে দুটি অজগর অবমুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিভাগীয় কর্মকর্তা বলেছেন তিনটি অজগর ছাড়া হয়েছে!

তবে আরো বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কথা বলছেন ওই বনের প্রাণী সেবক ফাহমিদ।

তিনি বলেন, আটক করা অজগরটি এ বনে অবমুক্ত করা দুটির একটিও নয়! এটা হয় পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে এসেছে, নয়তো এখানে আগে থেকেই ছিলো।

এর ফলে নওগাঁর ধামইরহাট জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি শালবনে ছেড়ে দেওয়া অজগরের সংখ্যা নিয়ে বন বিভাগ ও প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়ংকর বিভ্রান্তি ও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, আলতাদীঘি শালবনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দুটি অজগর। আর বিভাগীয় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা রেজাউল বলছেন ওই বনে মোট তিনটি অজগর ছাড়া হয়েছে।

এদিকে অজগরের সংখ্যা নিয়ে এ বড় ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

ধামইরহাট বন বিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিকের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে পর পর দুটি অজগর সাপ ছাড়া হয় আলতাদীঘি শালবনে। এদের মধ্যে রয়েছে ৩৩ কেজি ওজনের একটি পুরুষ সাবক। তখন তার বয়স ছিল আনুমানিক ৩ বছর। অন্যটি ১৮ কেজি ওজনের স্ত্রী শাবক।

বনে অবমুক্ত করার সময় স্ত্রী শাবকটির বয়স ছিল প্রায় দেড় বছর। এখন বন্য সেই প্রাণী দুটির ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই গুণ।

তিনি আরো জানান, আলতাদীঘি শালবনের জীব বৈচিত্র পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছে বন বিভাগ। সেই কাজের অংশ হিসেবেই রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তার মাধ্যমে অজগর দুটিকে এখানে অবমুক্ত করা হয়।

ধামইরহাটের শালবনে কর্মরত প্রাণী সেবক ফাহমিদ বাংলানিউজকে জানান, অজগর শাবক দুটি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকেই তারা সেগুলোর ওপর নজর রেখেছেন। বেশ কিছু দিন ধরে বড়টি শালবনের মইশুর এলাকায় ও ছোটটি দাদনপুর এলাকায় অবস্থান করছে।

ফাহমিদ বলেন, আটক করা অজগরটি এই বনে অবমুক্ত করা দুটি অজগেরর একটিও নয়। এটা হয় পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে এসেছে, নয়তো এখানে আগে থেকেই ছিলো।  

অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, আলতাদীঘি শালবনে অন্যান্য বন্য প্রাণী ও পাখির পাশাপাশি মোট তিনটি অজগর অবমুক্ত হয়েছে। এসব প্রাণী ছেড়ে দেওয়ার রীতিমতো ডকুমেন্ট সংরক্ষণ রয়েছে তার দপ্তরে।

বন বিভাগ কিংবা অন্যকেউ যদি তিনটি অজগরের স্থলে দুটির কথা বলে থাকেন তবে তা সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে শালবন ও সেখানকার বন্য প্রাণীর সংখ্যা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

ধামইরহাট শালবন এলাকার বাসিন্দা রাজু বাংলানিউজকে জানান, কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেওয়ার খবর শুনে এলাকার মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছেন।

বনবিভাগের লোকজন অজগর ধরে চুরি করে অন্য কোথাও বিক্রিও করে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রাণি বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ জামান বাংলানিউজকে বলেন, অজগর একটি বিপন্ন প্রাণী। তাই এটি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিলে সেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এর জন্য সংশ্লিষ্টরা কোনো ভাবেই দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

মঙ্গলবার রাতে ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেমায়েত উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আটক অজগরটি স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে আবারো বনে ছেড়ে দিতে না পরায় বুধবার সেটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজশাহীতে। তবে খাঁচা বন্দি ওই সাপটি এখনও ধামইরহাট বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়েই রাখা হয়েছে।

বুধবার দুপুরের মধ্যেই রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে এটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ইউএনও।

সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে অজগরটি শালবন সংলগ্ন মঙ্গলকোঠা গ্রামের বাসিন্দা আরাফাতের বাড়িতে চলে আসে। সেখান থেকে গ্রামবাসী ২৫ কেজি ওজনের ওই সাপটিকে আটক করে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৪

** আলতাদীঘির অজগরটি রাজশাহীতে যাবে দুপুরে
** ধামইরহাট শালবনে অবমুক্ত অজগর নিয়ে আতংক
** অজগর দু’টি সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
** খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে সেই অজগর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।