ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

শিকারে বিপন্নপ্রায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৪
শিকারে বিপন্নপ্রায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সুন্দরবন থেকে ফিরে: শিকারিদের হাতে বিপন্নপ্রায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। মায়াবী চিত্রা হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমিরসহ অন্য বন্যপ্রাণি নির্বিচারে শিকার ধ্বংস করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ ম্যানগ্রোভ বন।


 
সুন্দরবনে হরিণ শিকার একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার শিকারিদের কাছে। বরগুনা থেকে শরণখোলা, করমজল, জোংড়া, ভদ্রা হয়ে নিশানখালি, আদাঁচাই, পাটকোস্টা, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, নলিয়ান, কয়রা, বুড়িগোয়ালনি, কৈখালি, শ্যামনগরসহ পুরো সুন্দরবনেই হরিণ শিকারিদের অবাধ বিচরণ।
 
শিকারিরা সাধারণত দু’ভাবে- ফাঁদ পেতে ও গুলি করে হরিণ শিকার করে।
 
ফাঁস ফাঁদের মাধ্যমে শিকারিরা কেওড়া বনের পুরো এলাকা আড়াআড়ি ভাবে ঘিরে ফেলে। এতে ভাটার সময় বনের মধ্য থেকে যখন হরিণের পাল কেওড়া পাতা খেতে আসে তখন এ ফাঁদে আটকা পড়ে। কখনো একাধিক হরিণও ধরা পড়ে। একবার ফাঁদ পাতলে সেটি চলে অনেকদিন। এ ধরনের ফাঁদ তৈরিতে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কেজি চিকন নাইলন রশি ব্যবহৃত হয়।
sundarban_01 
ছিটকা ফাঁদ এক ধরনের ভয়ংকর হরিণ শিকারের অস্ত্র। এই ফাঁদ পেতে শিকারিকে কাছাকাছি জায়গায় থাকতে হয়। ফাঁদে হরিণ ধরা পড়ার ২/৫ মিনিটের মধ্যেই শিকারকে জবাই করতে হয় অথবা ছাড়িয়ে নিতে হয়। রশি ও গাছের চারা ব্যবহার করে এই ফাঁদ তৈরি করে শিকারিরা।
 
তবে গুলি করে হরিণ শিকারের সংখ্যাও কম নয়।
 
বন কর্মর্তাদের সহযোগিতায় অনেক সময়ই শৌখিন শিকারিো লাইসেন্স করা বন্দুক নিয়ে বনে গিয়ে হরিণ শিকার করে বলে অভিযোগ আছে।
 
এই প্রতিবেদকও এমন একটি ঘটনার সাক্ষী।
 
এছাড়া সুন্দরবনে থাকা ৩০টিরও বেশি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল নিয়মিত নিজেদের মাংসের চাহিদা পূরণ, কোস্টগার্ড, বনবিভাগ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রণেতাদের উপঢৌকন দেওয়ার জন্য অবাধে হরিণ শিকার করে।
sundarban_02 
কেবল হরিণই নয়, শিকারিদের লোভাতুর দৃষ্টি থেকে রেহাই পায়না রয়েল বেঙ্গল টাইগারও। তবে বাঘ শিকারে এগিয়ে আছে বনদস্যুরাই।
 
একটি ডাকাতদলের ব্যবস্থাপক বাংলানিউজকে জানান, গত মার্চ মাসে তারা নিশানখালি এলাকা থেকে দু’টি বাঘ গুলি করে হত্যা করেছিলেন। যার চামড়া দু’টি চোরাকারবারিরা মাত্র চার লাখ টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে।
 
ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই চামড়ার প্রতিটির মূল্য ১২ লাখ টাকা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
 
এছাড়া বাগের নখ, থাবা, দাঁত, হাড় ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ শিকারিদের কাছে খুবই মূল্যবান বলেও জানান তিনি।
 
বর্তমানে সুন্দরবনে এক লাখ থেকে দেড় লাখ হরিণ ও ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে বলে জানান সুন্দরবনের বন সংরক্ষক কার্তিক চন্দ্র সরকার।
sundarban_03 
শিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, শিকারতো ঠেকানো সম্ভব না। এটা ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন এনজিওদের মাধ্যমে মটিভিশন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বন সংলগ্ন অধিবাসী ও বনজীবীদের সচেতন করা হচ্ছে।
 
কার্তিক চন্দ্র সরকার আরও বলেন, শিকার নিয়ে আমাদের কর্মীদেরও হতাশা রয়েছে। কিছুদিন আগে ২৪ কেজি মাংসসহ চার হরিণ শিকারিকে আটক করে পুলিশে দেয় বনকর্মীরা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই শিকারিরা পরদিনই আদালত থেকে জামিনে বের হয়। এই অবস্থা চললে বনকর্মীদের মধ্যে হতাশা আশাটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।