ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

কোরিয়ানদের শান্তির প্রতীক মান্দারিন হাঁস

সৌরভ মাহমুদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৪
কোরিয়ানদের শান্তির প্রতীক মান্দারিন হাঁস মান্দারিন হাঁস

মান্দারিন হাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত প্রজাতির পাখি। সিলেট বিভাগের হাওরে শীতের সময় মাত্র একবার দেখা গিয়েছিল।

কেবল কোরিয়া, চীন ও জাপানে এ হাঁস প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখা যায়। এরা মাঝে মাঝে পৃথিবীর নানান জায়গায় বেড়াতে যায়। তার মধ্যে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও বার্লিন অন্যতম।

ভারত ও নেপালে কয়েক বছর পর-পর পরিযায়ী হয়ে আসার রেকর্ডও রয়েছে এদের। মান্দারিন হাঁস (Mandarin Duck) মিঠাপানির আর্দ্রভূমি, প্লাবিত ধানক্ষেত, বনের কাছের জলধারা ও তৃণময় জলাশয়ে বিচরণ করে। সাধারণত অন্য হাঁসের মিশ্র ঝাঁকে থাকতেই পছন্দ। জলে মাথা ডুবিয়ে ঘাস ও লতাপাতা থেকে খাবার সংগ্রহ করে এরা।

খাবার তালিকায় রয়েছে জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি , কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী ও উদ্ভিদ। তবে সময়ভেদে খাবারের ধরন পরিবর্তিত হয়। যেমন শীতের সময় এ হাঁস শস্যবীজ  খেতে ভালোবাসে। বসন্তে প্রধানত জলজ আগাছা ও বীজ, শামুক, পোকা, ছোট মাছ খায়। গ্রীষ্মে ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক ছোট সাপ খেতে পছন্দ করে। এরা মূলত খুব সকালে ও বেলাশেষে খাবার খায়। দিনের বেশিরভাগ সময় ও চড়া রোদে গাছের ছায়াময় ভূমিতে বসে থাকে কিংম্বা এলিয়ে পড়া তরুশাখার নিচের জলে ধীরে ধীরে সাঁতরে বেড়ায়।

এ হাঁস ভালো সাঁতারু ও দ্রুত উড়তে পারে। কিন্তু পানিতে ডুব দিতে তেমন পটু নয়। মে থেকে আগস্ট মাস প্রজননের সময়। বন্য অবস্থায় এ হাঁস ঘন গাছপালা সমৃদ্ধ বনের মধ্যে জলাশয়ের কাছাকাছি কোনো গাছের কোটরে বা গুহায়  ঘাস ও পালক বিছিয়ে বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ রঙের, সংখ্যায় ৯ থেকে ১২টি, সাধারণত ২৮ দিনে ডিম ফোটে। মেয়ে হাঁস  ডিমে তা দেয়, ছেলে হাঁস বাসা ও মেয়ে পাখির খাবার সংগ্রহ করে। ছানা ফুটলে মেয়ে পাখি উড়াল দিয়ে জলে বা মাটিতে  নামে, তার পর ছানারাও এক এক করে ঝাঁপ দেয়। সব ছানারা বাসা থেকে বের হলে মায়ের পিছনে পিছনে জলাশয়ে চরে বেড়ায়, খাবার খেতে শেখে।

মান্দারিন হাঁস বাহারি রঙের ছোট জলচর পাখি। ছেলে ও মেয়ে হাঁসের চেহারায় অনেক পার্থক্য। প্রজনন সময় ছেলে হাঁসের ডানায় কমলা রং, ডানায় নৌকার পালের মতো দুটি খাড়া পালক থাকে। গোল মাথায় থাকে বাদামি চাঁদি। চোখের উপরে চওড়া সাদা ছিটা-দাগ, ঘাড় ও চিবুক কমলা রঙের ঘন পালকে আবৃত। বগল কমলা, বুক সাদা, ঠোঁট লাল। চোখ ঘন বাদামি এবং কমলা-পীতাভ পা হলুদ। মেয়ে হাঁসের পিঠ জলপাই- বাদামি, দেহতল সাদা, সাদা ফুটফুটে বগল ও বুকে সাদা ডোরা থাকে। প্রজনন সময় ছাড়া ছেলে হাঁসের চেহারা প্রায় মেয়ে হাঁসের মত, তবে মাথা বাদামি, বুক ও বগলে বিচ্ছিন্ন ফোঁটা থাকে।

 কুকুর, উদ, ঈগল, প্যাঁচা, সাপ এ পাখির শত্রু। সুযোগ পেলেই এসব প্রাণীর শিকারে পারিণত হতে পারে সুন্দর এ পাখিরা। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নানান প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে এ হাঁসও রয়েছে।   জলচর পাখিদের জন্য একটি লেক করা হয়েছে। তবে জলাশয়টিতে তেমন কোনো জলজ উদ্ভিদ বা আগাছা দেখা যায়নি। জলজ আগাছা জলচর পাখিদের অন্যতম খাদ্য।

জলাশয়ের পাড়ে গাছপালাও তেমন নেই। প্রচুর রোদের সময় জলচর পাখির জন্য ছায়াময় আশ্রয় প্রয়োজন হয়। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি অচিরেই বিবেচনা করবেন। মান্দারিন হাঁস কোরিয়ানদের কাছে শান্তি ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। এ হাঁসের যুগলদের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন টিকে থাকে। সে জন্য কোরিয়ানারা এ হাঁসকে বিয়ের উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। চীনারাও এ হাঁসকে বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবে মনে করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।