আমাদের লাউয়াছড়া বন উঁচু গাছপালা ও বন্য পাখির জন্য বিখ্যাত। এ বনে বাস করে কয়েকশো প্রজাতির পাখি।
লাউয়াছড়া বনে তাই পাখি দেখতে গেলে ফিনলে চা বাগান পেরিয়ে বনের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া কালো পিচের সড়ক ধরে, রেল লাইন ও বনের ট্রেলে হাঁটলে কিছু পাখির দেখা পাওয়া যায় ও ছবি তোলা সহজ হয়। ঘন গাছপালার কারণে প্রাকৃতিক সূর্যালোক বনতলে ও বনের ভিতর কম আসে।
একদিন বনের পথে হাঁটতে হাঁটতে সবুজ ও নীলচে পালকের একটি পাখি দেখতে পাই। উঁচু গাছের মগডালে বসে ডাকছে। পাখির আকার দেখে মনে হলো এটি আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজাতির সুইচোরা পাখি। এটির দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি, ওজন ৯০ গ্রাম। অনেক দিন অপেক্ষার পর এ পাখির দেখা পেলাম। লাউয়াছড়া বনে ১৫ বার গিয়েছি, তবে নীলদাড়ি সুইচোরার দেখা একবারই পেয়েছিলাম।
আমাদের দেশে চার প্রজাতির সুইচোরা পাখির বাস, এরা হলো-নীল দাড়ি সুইচোরা, খয়রামাথা সুইচোরা, সবুজ সুইচোরা ও নীললেজ সুইচোরা। এদের মধ্যে নীলদাড়ি সুইচোরা সবচেয়ে বড় ও সংখ্যায় কম। বাংলাদেশের মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে এদের পাওয়া যায়।
নীলদাড়ি সুইচোরা (Blue-bearded Bee-eater) আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বন, বনের মধ্যেও জলের স্রোতধারা ও বনের আবাদযোগ্য জমিতে বিচরণ করে। সচারচার একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু জায়গা থেকে বাতাসে উড়ে শিকার ধরে। খাবার তালিকায় আছে বোলতা, মৌমাছি, গুবরে পোকা, ফড়িং ও ফুলের মিষ্টি রস। সচরাচর কর্কশ গলায় ডাকে, কর-র-ও,কর-র-র... শব্দে। ফেব্রুয়ারি-আগস্ট মাসে প্রজননকালে বনের জলাধারের খাড়া পাড়ে বা পাহাড়ের পলিমাটিতে ৫ থেকে ৬ সেমি ব্যাস ও ১.৫ থেকে ৩.০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলি সাদা, সংখ্যায় ৪ থেকে ৬টি। নীলদাড়ি সুইচোরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি এবং অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, থ্যাইল্যান্ড ও ইন্দেচীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ পাখির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
নীলদাড়ি সুইচোরা নীল কপাল ও নীল গলার সবুজ পাখি। নীল কপাল ছাড়া পিঠ সবুজাভাব। লম্বা পালক দাঁড়ির মতো গঠন লাভ করেছে। গলা ও বুক কালচে নীল। হলুদাভ-পীতাভ ডোরাসহ পেট ও বগল সবুজ। বর্গাকার প্রান্তদেশসহ লেজের বাইরের পালক পীতাভ রঙের। ওড়ার সময় লেজ ত্রিকোণাকার ও ডানার নিচের ঢাকনি হলুদাভাব-পীতাভ দেখায়। ঠোঁট বাঁকা ও শিঙ-বাদামি এবং নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালি-কমলা ও মুখ ধুসরাভ-পাটল বর্ণের। পা ও পায়ের পাতা ফিকে হলুদাভাব-সবুজ। নখর শিঙ-বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখি দেখতে একইরকম। অপরিণত পাখির কোনো দাড়ি থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৪