ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

এবার কচ্ছপের শরীরে ট্রান্সমিটার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪
এবার কচ্ছপের শরীরে ট্রান্সমিটার

শ্রীমঙ্গল: অজগরের পর এবার লাউয়াছড়া বনে ট্রান্সমিটার শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কচ্ছপ। মাত্র ২০ গ্রাম ওজন ট্রান্সমিটারটির।

আর কচ্ছপটির ওজন দুই কেজি। শরীরের ছোট একটি যন্ত্রাংশ গবেষকদের সাহায্য করবে নানা তথ্য পেতে। রেডিও ট্রান্সমিটারে প্রাপ্ত প্রতিটি তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হবে।

এভাবেই পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন এই উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপটি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারবেন গবেষক দল।

ছোটবেলার পড়া খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটির মতো সে যখন ছোট ছোট পায়ের ধীর গতিতে অগ্রসর হবে তখন এই ট্রান্সমিটার জানান দেবে তার বর্তমান শারীরিক উপস্থিতি। পাহাড়ি পথের ঝোপ-ঝাড়ময় স্থানে তার খনিকের বিশ্রাম অথবা দিনযাপনের নানা তথ্য পেয়ে যাবেন গবেষকরা। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই তিনটি কচ্ছপের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হলো ট্রান্সমিটার। হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপকে সোনালি কচ্ছপও বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Elongated Tortoise এবং বৈজ্ঞানিক নাম Imdptestido elongata।

শনিবার দুপুরে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপিত কচ্ছপটিকে অবমুক্ত করা হয়। ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয় শুক্রবার বিকেলে। এর আগে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আমেরিকার বন্যপ্রাণি গবেষক ও আলোকচিত্রী স্কট ট্রেগসার তাদের গায়ে যন্ত্রটি স্থাপন করেন।

শুক্রবার বিকেলে লাউয়াছড়ায় ট্রান্সমিটার লাগানো একটি হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ অবমুক্তির মাধ্যমে এ প্রকল্পের শুভ সূচনা হয়। অবমুক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মরতুজ আলী, বন্যপ্রাণি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কারিনামের প্রধান নির্বাহী ড. এসএমএ রশিদ, দেশের স্বনামধন্য উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী বিশেষজ্ঞ (হার্পেটোলজিস্ট) এবং কচ্ছপ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান, উভচর প্রাণী গবেষক অনিমেষ ঘোষ অয়ন, গবেষক ফারজানা তাসকিন প্রমুখ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ক্যারিনাম) এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ কচ্ছপ প্রকল্প’ নামে একটি গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

নয়জন বিদেশি বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই কচ্ছপ গবেষণা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটে। এরা হলেন- আমেরিকার বন্যপ্রাণি গবেষক ও আলোকচিত্রী স্কট ট্রেগসার, বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অ্যাশ উইস্কোভিজ,  প্রাণিচিকিৎসা (ভেটেরিনারি) বিভাগের গবেষক এরিন ট্রেগসার, উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী বিশেষজ্ঞ (হার্পেটোলজিস্ট) জনাথন হাকিম, পরিবেশ বিজ্ঞানী ডিন ল্যাম্বারর্স এবং উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী বিশেষজ্ঞ ইভান আরমবল, আস্ট্রেলিয়ার বন্যপ্রাণি গবেষক লকি গিলডিং, বন্যপ্রাণি গবেষক ম্যাক্স জনসন এবং মেক্সিকোর উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী বিশেষজ্ঞ রিকার্ডো রামিরেজ।

বন্যপ্রাণি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কারিনামের প্রধান নির্বাহী ড. এসএমএ রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ আজ পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন একটি প্রাণী। তাদের সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য প্রথম তিনটি কচ্ছপের শরীরে আমরা রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করে তাদের বনে ছেড়ে দিলাম। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য আমাদের এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষণে বিশেষ সাহায্য করবে।

তিনি আরও বলেন, বনবিভাগের সঙ্গে যৌথ উদ্যেগে আমরা ইতোমধ্যে তিন প্রজাতির দেশীয় কচ্ছপের প্রজনন রক্ষায় সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছি। এখন আমাদের গবেষণায় যুক্ত হলো এ প্রজাতির কচ্ছপটি।

দেশের স্বনামধন্য উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী বিশেষজ্ঞ (হার্পেটোলজিস্ট) এবং কচ্ছপ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ থেকে ৫ প্রজাতির কচ্ছপের বিচরণ রয়েছে। যাদের অধিকাংশই এখন  বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপকে পাহাড়ি অঞ্চলের অধিবাসীরা এবং চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা ধরে হত্যা করে খেয়ে ফেলে। এর ফলেই এরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ডাঙ্গায় থাকে বলে এরা সহজেই মানুষের নজরে আসে। বৃহত্তর সিলেট,  চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনেই অল্প সংখ্যায় এদের বসবাস। তাই এই প্রজাতিটিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা বৃহৎ উপর গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছি।

শাহরীয়ার সিজার রহমান আরও বলেন, বাংলা কচ্ছপের পর্যায়ে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপনের ঘটনাটি বাংলাদেশে এই প্রথম। হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ বিভিন্ন পাতা, সবুজ কচি ঘাস, ফুল, ফল ও ফাঙ্গাস খায়। এদের সারা শরীর জুড়ে হলুদ রঙের মধ্যে কালো কালো ছাপ রয়েছে। এরা ঘন বন, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, ঝোপঝার ও ছড়ার আশেপাশে থাকে। এরা সাধারণত একাই বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ও পুরুষ একত্রে থাকে। মে থেকে অক্টোরর এদের প্রজনন কাল। এরা সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ২টা থেকে ৯টা ডিম পাড়ে। মাটিতে গর্ত করে ডিমগুলোকে ঢেকে রেখে চলে আসে। ৩ থেকে সাড়ে ৫ মাস পর ছানা বের হয়। বাংলাদেশে ছাড়াও ভারত, নেপাল এবং দক্ষিণ পর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এদের পাওয়া যায়। ’

প্রতিবেদনের সবগুলো ছবি তুলেছেন আমেরিকার বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অ্যাশ উইস্কোভিজ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।