যদি বলা হয় মাছেরা তির ছুড়ে শিকার করতে পারে- কথাটি কী বিশ্বাসযোগ্য? বিস্ময়কর মনে হলেও কথাটি অনেকটাই সত্যি। তবে তির নয়! তির এখানে থুতু বা লালার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত।
এদের ইংরেজি নাম আর্চারফিস। মুখমণ্ডল বিশেষ বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ। মুখের উপরিভাগ লম্বা খাঁজকাটা ধরনের। ফলে অনায়াসে সফল তির নিক্ষেপে ওস্তাদ। জন্ম থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে তির ছোড়ার এই বিশেষ গুণটি পেয়ে যায় তারা। তির ছুড়ে শিকার করা এ মাছেদের নাম তাই হয়েছে তিরন্দাজ।
পানির উপরিভাগের গাছ, লতাপাতা বা জলজ উদ্ভিদের শরীরে বসে থাকা পোকামাকড়ের উপর তারা এ আক্রমণ চালায়। তিরন্দাজের মুখ হলো ধনুক আর পানি হলো তির। ছোটখাটো পোকা থেকে প্রজাপতি পর্যন্ত শিকার করে থাকে তিরন্দাজ মাছ। মুখ ভরে পানি নিয়ে শিকার তাক করে পিচকারির মতো পিচিক করে পানি ছোড়ে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক তিরন্দাজ মাছ তিন থেকে পাঁচ মিটার দূরত্বে অবস্থান করে থুতু বা পানি ছিটিয়ে শিকারকে ঘায়েল করতে পারে।
ইতালির মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদেরা জানিয়েছেন, শিকার ধরার জন্য এই বিশেষ প্রজাতির মাছেরা নিজেদের অজান্তেই পদার্থবিদ্যার সূত্রকে কাজে লাগায়। সাধারণত তিরন্দাজ মাছেরা ৫ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত প্রচণ্ড বেগে থুতু নিষ্ক্রমণ করতে পারে এবং ১-২ মিটার দূরে থাকা শিকারকে সহজেই ঘায়েল করে। তবে শিকারের আকৃতি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে এই বেগের পরিবর্তন হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানির উপরিভাগে শিকার যদি ১০ সেন্টিমিটার দূরত্বে থাকে তা হলে থুতুর বেগ ০ থেকে ২ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে। আবার শিকার যদি পানির উপরিভাগে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে থাকে তখন বেগ পরিবর্তিত হয়ে ২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটারের আশেপাশে থাকে।
গবেষকদের মতে, জলাভূমির সমান্তরালে ৭৪ ডিগ্রি কোণ করে এই ফোয়ারা শিকারের দিকে ছুটে যায়। আবার শিকারের অবস্থানের উপর নির্ভর করে কখনও ৪৫ থেকে ১১০ ডিগ্রিও হয়।
টক্সোটস্ গোত্রের এ মাছেদের মোট সাতটি প্রজাতি আছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় নোনা জল এদের বিশেষ পছন্দের জায়গা। তাছাড়া সমুদ্র ও মিঠে জলেও এদের দেখা পাওয়া যায়। গবেষণাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘পাবলিক লাইব্রেরি অফ সাইন্স’ এবং ‘প্লস ওয়ান’ নামক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৪