ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

দূষণে দুষ্ট ঢাকা!

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৪
দূষণে দুষ্ট ঢাকা!

ঢাকা: বেলা যত বাড়ে তত বাড়ে ধুলো-বালি। সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকার বাতাসে উড়ে বেড়ায় অজস্র ধুলোকণা।

রাস্তায় ও মোড়ে গর্ত-খোঁড়াখুড়ি, গাড়ির বিকট হর্ন, সঙ্গে কালো ধোঁয়া প্রতিটি মোড় আর সড়কের দৃশ্য ভয়াবহ করে তুলছে।

প্রতি মুহূর্তে ঘিঞ্জি করে একের পর ইট-সুড়কির দেয়াল উঠছে ঢাকায়। যা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ। প্রকট হচ্ছে জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এসব সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা।

রাজধানী ঢাকার পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় প্রায় দুই কোটি মানুষের জনস্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন তারা।

সম্প্রতি বিশ্বের ৯১টি দেশের এক হাজার ছয়শ’টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ২০টি শহরের তালিকায় রয়েছে ঢাকা এবং এর পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর।   পরিবেশদূষণের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ তথ্য জানিয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ডা. মুনির আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত গরমে এখন নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। ১০ থেকে ২০ বছর আগে ঢাকার যে তাপমাত্রা ছিলো সেটা স্বাভাবিক ধরা যেতো, কিন্তু এখন সেটা নেই। ঢাকায় বৃষ্টিপাত একেবারে কমে গেছে।

আইইডিসিআর’র একটি রিপোর্ট তুলে ধরে তিনি বলেন, গত বছরের এপ্রিল-মে তে ঢাকায় ডায়রিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। একইসাথে ভাইরাস ব্যকটেরিয়ার আক্রমণ ছিলো।

ডা. মুনির আরও বলেন, ঢাকার বাতাসে দূষিত উপাদানের পরিমাণ  ক্রমশ বাড়ছে। শহরের যত্রতত্র মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুল ভবনের উপরও মোবাইল টাওয়ার দেখা যায়। মোবাইল টাওয়ার থেকে যে রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ছে তা মানবদেহের ক্ষতি করছে।

গাড়ির হর্ন এবং কালো ধোঁয়ায় শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান এই জনস্বাস্থ্য গবেষক।

পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে তার পরামর্শ, পরিবেশকে দূষণের বিপর্য থেকে বাঁচানোর   প্রথম ধাপই হবে যে, ঢাকায় আর নতুন কোনো বস্তি বাড়তে দেওয়া যাবে না। আর এখনই পরিবেশ নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে, যেমনটি ভিয়েতনাম করেছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর আরেক গবেষক ডা. ফারহানা হক বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা কাজে যুক্ত রয়েছেন।

তিনি বলেন, দূষণের কারণে ঢাকার জনজীবন হুমকির মুখে রয়েছে। তাপমাত্রা যেমন অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। তেমনি এর কারণে রোগ বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ময়লা আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণের পরে বুড়িগঙ্গায় ফেলা হলে নদী দূষণ রোধ হবে। কিন্তু সেটা কোথাও করা হচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ও সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. ফজলুল করিম কাওছার বাংলানউজকে বলেন, দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ সবেচেয়ে বেশি। বায়ু দূষণের ফলে মানুষের শ্বাসনালীর রোগ বেশি হচ্ছে।

তিনি মনে করেন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। নতুন ও পরিবেশবান্ধব মেশিন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান চৌধুরী সুজন তার মতামত তুলে ধরে বলেন, ঢাকায় মানুষ বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। ঢাকায় এখন মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার সামান্য কোনো জায়গা নেই। প্রতিদিন ঢাকায় এসে যোগ হয় হাজারো মানুষ। এই বিপুল জনসংখ্যার ভার নিয়ে আসলে ঢাকা বেশিদিন ঠিকবে না।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিম হোসাইন জানান, রাস্তার পাশের ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়া ময়লায় পরিবেশ দূষিত হয়। এগুলো একত্রিত করে আমরা শক্তিতে রূপান্তর করতে পারি। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দ মাহমুদ মূসা বাংলানউজকে বলেন, ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশুদ্ধ এবং সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ে ঢাকাবাসীকে এখনই সতর্ক না করলে আগামীতে এ শহরে মহাবিপর্যয় ঘটতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।