ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বুকের মধ্যেও ভাঙনের আওয়াজ পান কুড়িগ্রামের মানুষ!

মাহাবুর আলম সোহাগ, রোভিং করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৪
বুকের মধ্যেও ভাঙনের আওয়াজ পান কুড়িগ্রামের মানুষ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুড়িগ্রাম থেকে: উত্তর জনপদের নদী ভাঙন কবলিত জেলা কুড়িগ্রাম। প্রতিদিন বসত-ভিটা, আবাদি জমিসহ অনেক কিছুই গিলে খাচ্ছে এ জেলার নদ-নদীগুলো।

ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদীর অব্যাহত ভাঙনে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন এ জেলার অসংখ্য মানুষ।

এসব কারণে দেশের মানচিত্রে আয়তনের দিক থেকে ছোট হয়ে আসছে কুড়িগ্রাম।

নদী ভাঙন রোধে সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত সঠিক কোনো পদক্ষেপ না গ্রহণ করায় শেষ হতে বসেছে কুড়িগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষের জীবন-জীবিকা।

চোখের সামনে প্রতিদিন ভাঙন দেখতে দেখতে বুকের মধ্যেও ভাঙনের আওয়াজ বইতে শুরু করেছে এখানকার মানুষের।

সরেজমিনে কুড়িগ্রাম শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে চিলাহাটী রমনা ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ভাঙনের চিত্র।

এখন বর্তমানে যেখানে রমনা ঘাট তৈরি হয়ছে এর আগে ওই ঘাটটি ছিল বর্তমান ঘাট থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে। কিন্তু, গত দুই বছরে ওই ১১ কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়ি ও আবাদি জমি চলে গেছে ব্রহ্মপুত্রেরে পেটে।

চিলমারী উপজেলার রমনা ঘাট এলাকায় ভাঙনে বাড়ি-ঘরহারা বেশ কয়েকজন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা।

তাদের মধ্যে মমিন মিয়া জানান, তিনি এখন পেশায় বাদাম বিক্রেতা। আগে তিনি কৃষিকাজ করতেন। বাবার কাছ থেকে প্রায় দুই বিঘা ফসলি জমি
পেয়েছিলেন তিনি। বাড়ির ভিটা ছিল ১০ শতক জমির ওপরে। কিন্তু, এখন তার কিছুই নেই। রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র তার সব কেড়ে নিয়ে গেছে। প্রথমবার বাড়ি ভাঙার পর নতুন করে তৈরি করেছিলেন আরেকটি বাড়ি। সেটিও পরেরবার ভেঙে নিয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র। এখন তার ঠাঁই ওই ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠা এক চরে।

দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে একটি কক্ষে বসবাস করছেন তিনি। আর পেশায় তিনি এখন বাদাম বিক্রেতা। সারাদিন বাদাম বিক্রির পর যা আয় হচ্ছে তা দিয়েই চলছে তার সংসার। অথচ এক সময় কতোই না সুখে ছিলেন তিনি।

মমিন মিয়া বলেন, এক সময় আমাদের এলাকার সবাই কৃষিকাজ করতেন। আর এখন অনেকেই আমার মতো বাদামের ঝোলা নিয়ে ঘুরছেন এক চর থেকে চরে। অনেকের জীবন চলছে মাছ বিক্রি করে। আমাদের এলাকার সব কৃষক এখন ফকিরে পরিণত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন শুধুমাত্র আমাদের জমি ও বসত-ভিটা নিয়েই যায়নি। আমাদের অসংখ্য আত্মীয়-স্বজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই রাক্ষসী নদী।

রৌমারী ঘাটের মাঝি ফজিলত বাংলানিউজকে বলেন, যেদিক দিয়ে ব্রহ্মপুত্র গেছে, সেদিকটাই ধ্বংস করে গেছে। প্রতিদিন নদীর আয়তন বাড়ছে। কমছে ফসলি জমি। সরকার যদি তাড়াতাড়ি এ ভাঙন প্রতিরোধ না করে তাহলে নদীতে পরিণত হবে এই কুড়িগ্রাম।

তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রার্থীদের কাছে আমাদের বরাবর একটাই দাবি, নদী থেকে আমাদের বাঁচান। কিন্তু যেই ভোট শেষ, সেই সব শেষ। আজো
দেখলাম না নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

একই চিত্র রাজীবপুর উপজেলার চরগুলোর। গত দুই বছরে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা গ্রাস করে ফেলেছে ব্রহ্মপুত্র। বর্তমানে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে
উপজেলা পরিষদের ভবন। সামনের বর্ষায় এ ভবনও নদীর পেটে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী আলতাফ ও সজল।

মাত্র তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজীবপুর উপজেলা। ইতোমধ্যে ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়ন শেষ হতে বসেছে।

এ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে খুব তাড়াতাড়ি এ ইউনিয়নটিও শেষ করে দেবে ব্রহ্মপুত্র।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, এ জেলার আয়তন ২২৫৫.২৯ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে নদীপথের দৈর্ঘ্য ১৪৭.২০ কিলোমিটার।

তিনি বলেন, ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। ইতোমধ্যে রমনা ঘাটের উত্তর দিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম চলবে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ভাঙন রোধে আটশ’ মিটার বাঁধের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ কাজ দ্রুতই শুরু হবে।

নদী ভাঙনের ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন প্রকল্প ইতোমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ভাঙন কবলিত এ এলাকার মানুষের কষ্টের অবসান ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।