ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

সাদাচাঁপার স্নিগ্ধ শোভা

মোকারম হোসেন, ন্যাচার অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪
সাদাচাঁপার স্নিগ্ধ শোভা

ঢাকা: আমাদের দেশে সাদাচাঁপা আছে কী নেই এনিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে একধরনের কৌতূহল রয়েছে। সেই অদৃশ্য কৌতূহলই বছর কয়েক আগে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান আলোচনায়।



বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহীম ফোনে জানান, ধানমন্ডির ৫/এ সড়কেই খোঁজ মিলেছে একটি সাদাচাঁপার। জাহাজ অবয়বের দালানটির বিপরীত দিকে, লেকেরপাড়ে পায়ে হাঁটা পথের ধারেই আছে গাছটি। দেখতে গেলাম সাদাচাঁপা। সত্যিই তো, সাদাচাঁপা। গাছটি খুব বেশি বড় নয়, ফুলও বিক্ষিপ্ত, মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি। স্বর্ণচাঁপার মতো ততটা পুষ্পপ্রাচুর্য নেই। তবে গড়ন ও গন্ধ একই রকম, তফাৎ শুধু বর্ণে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে মোটামুটি সহজলভ্য হলেও আমাদের দেশে জানামতে কয়েকটি গাছ আছে বিমানবন্দর সড়ক লাগোয়া আর্মি স্টেডিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংলগ্ন ডা. মিলন স্মৃতিস্তম্ভ ও ফরিদপুর শহরে। কিন্তু সে তুলনায় স্বর্ণচাঁপা বেশ সহজলভ্য। ঢাকার বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে বেড়াতে গেলে গ্রীষ্মের আলুথালু বাতাসে হঠাৎ করেই স্বর্ণচাঁপার সুবাস আপনার মন ভরিয়ে দেবে। শাহবাগের ক্ষুদে ফুল বিক্রেতাদের কাছেও পাবেন দু’এক আঁটি। আর যদি এই সাদা চাঁপাটি দেখতে চান তাহলে যেতে হবে উল্লিখিত স্থানগুলোয়।

চাঁপাফুলের প্রতি আমাদের কিঞ্চিৎ পক্ষপাত আছে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে তার অবস্থান। মৈমনসিংহ গীতিকায় আছে- ‘চাইর কোনা পুষ্কুনির পারে চাম্পা নাগেশ্বর/ ডাল ভাঙ্গ পুষ্প তুল কে তুমি নাগর। ’ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মাখব গায়ে ফুলের রেণু চাঁপার বনে লুটি। ’ চাঁপা সুষমা ও সুগন্ধের জন্য কাব্য, কলা, উপহার, অর্চনা সর্বত্রই ব্যবহৃত। চাঁপাফুলকে আঞ্চলিক ভাষায় চাম্পা ফুলও বলা হয়। প্রাচীন লোককথায়ও চাম্পা নামটিই এসেছে বার বার।

এখানে বলে রাখা ভালো, সব চাঁপাই চাঁপা নয়। প্রসঙ্গত, কনকচাঁপার কথা বলা যেতে পারে। নাম চাঁপা হলেও আদতে সে চাঁপা পরিবারের সদস্য নয়। একটির সঙ্গে অন্যটির বিস্তর ফারাক। চাঁপার উজ্জ্বল বর্ণ ও স্নিগ্ধ সৌরভ পবিত্রতার প্রতীক। বৃদ্ধি দ্রুত, জীবন দীর্ঘ, চাষ সহজ এবং প্রস্ফুটন অফুরান। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে গাছ অত্যন্ত পবিত্র। শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধমূর্তি তৈরিতে এই কাঠ বহুল ব্যবহার্য।
 
স্বর্ণচাঁপার মতো সাদাচাঁপাও (Michelia champaca Alba) মূলত পাহাড়ি প্রজাতি। তবে সমতলেও বৃদ্ধি স্বাভাবিক। গাছের কাণ্ড সরল, উন্নত, মসৃণ ও ধূসর। পাতা চ্যাপ্টা, উজ্জ্বল-সবুজ, একান্তরে ঘনবদ্ধ। ফুল একক, কাক্ষিক এবং সাদাটে। পাপড়ি সংখ্যা প্রায় ১৫, তুলনামূলকভাবে ছোট ও চিকন। আর স্বর্ণচাঁপার রং ম্লান-হলুদ, সোনালি কিংবা প্রায় সাদা। ফুলের বর্ণগত বিচিত্রতায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাটি, আবহাওয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমনকি সতেজ ও বাসি ফুলের ক্ষেত্রেও রঙের তারতম্য হতে পারে। পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত চাঁপা তীব্র সুগন্ধি। গ্রীষ্মের প্রথমভাগ থেকে বর্ষা-শরৎ অবধি ফুল থাকে। ফুল শেষ হলে গুচ্ছবদ্ধ ফল ধরে। দেখতে অনেকটা আঙুরের মতো। কাক ও শালিকের প্রিয় খাদ্য। চাঁপা ভেষজগুণেও অনন্য। বাঁকল ও ফুল বাতরোগের ওষুধ। ফুলের আরক চক্ষুরোগে ব্যবহার্য। বীজ পা-ক্ষতে উপকারি। কাঠ দারুমূল্যযুক্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।