ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

মনপুরার বনাঞ্চলের হরিণ লোকালয়ে

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৪
মনপুরার বনাঞ্চলের হরিণ লোকালয়ে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: ভোলার মনপুরার বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে চলে আসছে বনের হরিণ। আবাসস্থলে খাদ্য-মিঠা পানির সংকট, নির্বিচারে গাছ কাটা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব হরিণ সংরক্ষিত বন থেকে লোকালয়ে চলে আসছে।



গত এক মাসে লোকালয়ে আসা ১০টি হরিণ উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করে দিয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। লোকালয়ে আসা এসব হরিণকে লক্ষ্য করে চোরা শিকারীরাও তৎপর হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

বন বিভাগ ও এলাকাবাসী জানায়, ভোলার চর কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর পিয়াল, কলাতলীর চর, চর জামশেদ, চর পাতালিয়া, সোনার চর, চর সামসুদ্দিন, জনতা বাজার, আলম নগর ক্রোস ডেম, চর উড়িল, বদনার চর, সাকুচিয়া, হাজিরহাটে রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার চিত্রা হরিণ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ থেকে দল বেদে হরিণ মনুপরা ও তজুমদ্দিনসহ বিভিন্ন স্থানে ভাসতে ভাসতে লোকালয়ে চলে আসছে। এর মধ্যে কিছু আসছে খাদ্যের সন্ধানে এবং কিছু মিঠা পানির সন্ধানে। হরিণ দেখে আবার স্থানীয়রা ধাওয়া করছে। ফলে চারদিকেই বিপদে আছে বনাঞ্চলের হরিণরা।

কলেজ শিক্ষক মাহাবুবুল আলম শাহিন জানান, দুর্বৃত্তরা বনের গাছ কেটে সাবাড় করছে। এতে আবাসস্থল সংকটসহ প্রচণ্ড তাপ, বৃষ্টি না হওয়া, আবাসস্থলে খাবার ও মিঠা পানির সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে হরিণ লোকালয়ে চলে আসছে।

তিনি আরো জানান, অনেক সময় লোকালয়ে আসা এসব হরিণকে আটক করে স্থানীয়রা। বন বিভাগ সঠিক নজরদারি করলে এসব হরিণ নিরাপদে রাখা সম্ভব। তবে বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে প্রায়ই শিকারীরা হরিণ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।



স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল, লোকমান, সেরাজুল জানান, হরিণ রক্ষার জন্য জনগনের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চললেও চলতি বছরে তা করা হয়নি, ফলে মানুষ হরিণ দেখেই ধাওয়া করছে। এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে অনেক সময় হরিণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে আবার মারাও যাচ্ছে।

ভোলা শহর থেকে মনপুরায় হরিণ দেখতে এসেছেন রাশেদ। তিনি জানান, হঠাৎ করেই লোকালয়ে আসছে শুরু করেছে হরিণ। গভীর জঙ্গলে গিয়েও যে হরিণের দেখা পাওয়া দুস্কর ছিল সে হরিণই এখন মানুষ দেখছে। তবে এদের দেখতে পেয়েই ধরার জন্য তাড়া করছে মানুষ। এখনই হরিণ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাল পেতে ও বন্দুক দিয়ে দিয়ে এক শ্রেণির শিকারী হরিণ শিকারে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তারা পুলিশ ও বন বিভাগের চোখের আড়ালে জঙ্গল থেকে হরিণ ধরে মাংস ও চামড়া বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। এদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু অসাধু জেলে চক্র।

মনপুরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকী  বাংলানিউজকে জানান, আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। চোরা শিকারিরা যাতে হরিণ শিকার করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য পুলিশকে কঠোর নজরদারী রাখতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু হরিণ উদ্ধার করাও হয়েছে।

ওসি আরো জানান, হরিণ লোকালয়ে চলে আসছে মিঠা পানির অভাবে। বনাঞ্চলগুলোতে পুকুর ও খাল তৈরির জন্য একটি প্রজেক্ট বন বিভাগের মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে। পুকুর হয়ে গেলে হরিণ আর লোকালয়ে আসবে না।

হরিণের দল লোকালয়ে আসার বিষয়টি শিকার করে মনপুরা বন বিভাগের রেঞ্চ কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, আমরা এ পর্যন্ত ১০টি হরিণ উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করে দিয়েছি। বনে মিঠা পানির সংকট থাকায় পানি ও খাদ্যের সন্ধানে হরিণ চলে আসছে লোকালয়ে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad