প্রাণীদের বড়ই ভালোবাসেন তিনি। অনেক সময় ঠিকমতো নিজেও খেতে পারেন না।
প্রাণীপ্রেমী এই মানুষটির নাম কাকলি গুপ্ত। কলকাতা সাউথ সিটি কলেজের হিসাবশাস্ত্র বিভাগের সাবেক ছাত্রী তিনি। ঢাকুরিয়া আর্মি হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী রেললাইন বস্তির এক কোণে কাকলিদের বাড়ি। ঘিঞ্জি গলির মধ্যে ভাঙাচোরা একটি বাড়ি।
রাস্তার কুকুরদের নির্বীজকরণের কাজ করতেন মা কায়া গুপ্ত। এই কাজের পুরস্কারস্বরূপ পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনের স্বীকৃতিও। মাকে সাহায্যও করতেন তিনি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে। এভাবেই শুরু। রোগভোগে বাবার চিরপ্রস্থান হয়েছিল আগেই। মায়ের মৃত্যুর পর বাড়িতে থাকা প্রাণীদের দায়-দায়িত্ব এসে যায় তার উপরই। ট্রেনে পা-কাটা কুকুর, রাস্তায় ফেলে দেওয়া বেড়াল-বাচ্চা, ঘুড়ির সুতোয় ডানা-কাটা পায়রা, হায়না, সজারু, প্রভৃতি প্রাণী আজ তার ভালোবাসা ও সেবায় সিক্ত। বিভিন্ন খাচার দুর্গন্ধ বাতাস ভারি করে রাখে।
পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী কাকলি গণমাধ্যমকে বলেন, রাত-বিরেতে ব্যাগে ভরে কুকুর, বিড়ালের বাচ্চা ফেলে দিয়ে যায় অচেনা লোকজন। ওগুলোকে আমার কাছেই রেখে দেই আমি। খবর পেলে রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ, দুর্ঘটনায় জখম প্রাণীগুলোকে নিয়ে আসি, সেবা করি।
তার আশ্রয়ে এখন ৬৫-৭০টি কুকুর-বেড়াল রয়েছে বলে তিনি জানান। কাকলি আরও বলেন, এক সংস্থার কয়েকজন সদস্য প্রথম দিকে কিছুটা সাহায্য করতেন। সে টাকা শেষ হওয়ার পরে মা এবং আমার গয়নাও বিক্রি করে দিই। বাবার কেনা একটা ছোট জমিও বিক্রি করে দিতে হয়।
এরকম জীবন বেছে নেওয়া সর্ম্পকে কাকলি বলেন, নিজের জন্য ভেবে দেখার সময় পাইনি। চাকরি খোঁজার সময়ও মেলেনি। আমি পাশে না-থাকলে, অসহায় প্রাণীগুলো হয়তো বাঁচতেই পারত না। ’ এখন শহরের কয়েকজন পশুপ্রেমীর কাছ থেকে সামান্য অর্থসাহায্য পান তিনি। কিন্তু তাতে খরচ কুলোয় না। এক বেলার ওই খাবার জোগাতেই মাসে খরচ হয়ে যায় ১২-১৫ হাজার টাকা। কাকলি বলেন, ওদের কারও শরীর খুব খারাপ হলে, চিকিৎসায় এক দিনে ৫-১০ হাজার টাকাও খরচ হয়ে যায়।
সূত্র: ভারতীয় গণমাধ্যম
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৪