সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে: সুনামগঞ্জ জেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা জাদুকাটা নদীটি জাদুর মতোই মোহময়। দেশের অন্য শত-সহস্র নদী থেকে এ নদীর সৌন্দর্য অনেকটাই আলাদা।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের জাদুকাটা নদী কিছুটা হলেও আমাদের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে পারে এখনও।
জাফলংয়ের মতো এখানেও প্রকৃতির প্রায় একই বিন্যাস। অদূরেই মেঘালয়ের শৈল সারি। আর উজান থেকে বারেক টিলার কোলঘেঁষে নেমে এসেছে রূপসী জাদুকাটা। এই টিলায় বসে খুব সহজেই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। নদীর পানির স্বচ্ছ নীলচে আভা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শীতের উজ্জ্বল নরম রোদ নদী তরঙ্গে স্বপ্নের শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। এই শিহরণ পরিযায়ী মনকে আরো ব্যাকুল করে। এসবের সঙ্গে ভালোলাগার মতো আছে নিস্তদ্ধতা, নির্জনতা, সতেজ প্রকৃতি আর পাখির সংলাপ।
স্থানীয়দের মতে এ নদীর বালি উৎকৃষ্ট মানের। উজান থেকে ভেসে আসে পাথরও। এই বালি ও পাথরই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটির। জাতীয়ভাবে একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানের স্বীকৃতি মেলার আগেই হারিয়ে যেতে বসেছে সেখানকার সৌন্দর্য। এখানেও পৌঁছে গেছে বালি ও পাথর উত্তোলনকারীদের একটি বড় দল। শত শত মানুষ সারাদিন নৌকা আর বোমা মেশিন নিয়ে ব্যস্ত। মেশিনের শব্দ আর মানুষের কোলাহলে মোহনীয় জাদুকাটা অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে। হারিয়েছে তার সৌন্দর্য।
এসবই বাণিজ্যিক অপতৎপরতা। যাদুকাটা নদীর এই বালি ও পাথর ঘিরে একটি বড় ধরনের দালাল ও ফড়িয়া চক্রও গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখার যেন কেউ নেই।
মাত্র কয়েক বছর আগেও নদীর পাড়ঘেঁষা বারেক টিলায় বসে যাদুকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। কিন্তু পাথরের লোভে পাড় কাটতে থাকায় টিলার বিরাট একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। ইতোমধ্যে ধবংস হয়েছে টিলার সব গাছপালা।
জাফলং এখন আর আমাদের চোখের তৃষ্ণা কিংবা মনের ক্ষুধা কোনোটাই মেটাতে পারে না। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানটি একদল হিংস্র মানুষের থাবায় ক্ষতবিক্ষত। অনিন্দ্য সুন্দর জাদুকাটাও একইভাবে তার রূপ জৌলুস হারাচ্ছে।
পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য পাতায় লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪