ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ফ্ল্যাটে বুলবুলির সংসার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৪
ফ্ল্যাটে বুলবুলির সংসার ছবিগুলো তুলেছেন বিপাশা গুহঠাকুরতা

ঢাকা: আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রিয় ছিল পাখি বুলবুলি। অনেক গান তিনি রচনা করেছেন এ পাখিকে নিয়ে।

বুলবুলি মাঝারি আকারের পাখি। এরা পুরো বাংলাদেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সারাক্ষণই এরা দৌড়-ঝাঁপ ও ছোটাছুটি করে থাকে। আপন মনে গান গায়। চঞ্চল স্বভাবের পাখিও বলা হয় তাকে।
1_1_
সম্প্রতি একজোড়া বুলবুলি দম্পতি সংসার পেতে ছানা ফুটিয়েছে স্বনামধন্য নজরুল সঙ্গীত শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতার ফ্ল্যাটে। সেই বুলবুলি দম্পতির তৃণলতা সংগ্রহ, তারপর বাসা তৈরি, এরপর ডিম দেওয়া এবং সবশেষে ছানা ফোটানো। এ ঘটনার পর্বগুলো বিপাশা প্রত্যক্ষ করেছেন নিজ চোখে পরম বিস্ময়ে। স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসায় তাদের আপন করে নিয়েছেন তিনি। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন- ‌‘আমার বুলবুল ছানার চোখ ফুটেছে। এখন কিচির মিচিরে মুখরিত করে রাখছে। মা-বাবার কাছে খাবার চাইছে। একটু একটু করে পশম গজাচ্ছে। সবার দোয়া চাই। ’ তার ওই ফ্ল্যাটটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘সি-ব্লক’ এ নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির বিপরীতে।
2_2
আননন্দময় অনুভূতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে বাংলানিউজকে বিপাশা গুহঠাকুরতা বলেন, ‘কী যে ভালো লাগছে– তা বলে বোঝাবার নয়। ‌আমার এ ফ্ল্যাটে দোয়েল, মৌটুসি, চড়ুই, শালিক, বুলবুলি পাখিরা আসে। আমি তাদের চাল-ডাল-শস্যদানা এগুলো খেতে দেই। প্রথমে আমি দেখলাম দুটি বুলবুলি পাখি এসে খড়কুটো, শুকনো ঘাস নিয়ে ওড়াউড়ি করছে। খাবার খেয়েও উড়ে তারা যাচ্ছে না। এর দু’দিন পর দেখলাম একটি ঝুলন্ত লতানো গাছে খুব সুন্দর ঝুড়ির মতো করে ছোট্ট একটি বাসা তৈরি করেছে। আট-দশ দিন পর দেখি তাতে ৩টি ডিমও পেড়েছে। তার কিছুদিন পরে গত ১০ এপ্রিলে হঠাৎ কিচিরমিচির শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে ওপরে উঠে দেখি মাংশপিণ্ডের মতো দুটো ছানা। ’
3_3
বিপাশা গুহঠাকুরতা আরও বলেন, ‘পরিবারে নতুন সন্তান এলে মানুষ যেভাবে প্রচণ্ড খুশি হয়, ঠিক তেমনই আমি এবং আমার পরিবারের অন্যরাও এই বুলবুলির ছানাগুলোকে দেখে প্রচণ্ডভাবে আনন্দিত হয়েছি। আমি আমার ফ্ল্যাটের একটি অংশ গাছগাছালি দিয়ে কিছুটা প্রকৃতিময় পরিবেশ তৈরি করে রেখেছি। টবগুলো একটু উপরে তুলে রেখেছি। যাতে করে গাছগুলো আমাদের হাতের নাগালের বাইরে থাকে। শালিক, চড়াই এরা আমার এখানে ছানা ফুটিয়েছে। তবে বুলবুলি এই প্রথম ছানা ফুটালো। বাসায় থাকলেই আমি ওদের এখন পাহারা দিয়ে রাখছি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার প্রথম কাজ হলো ওই ছানাগুলো ঠিক আছে কী না, পাখিগুলো খাচ্ছে কী না -এগুলো দেখা। ’
4_4_
বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি ও বন্যপ্রাণী গবেষক শরীফ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিজের ফ্ল্যাটে পাখির ছানা ফোটার আনন্দ সত্যিই বর্ণনাতীত। ঢাকা শহরে বুলবুলি পাখিরা দেবদারু, মেহগুনি, কাঠবাদাম প্রভৃতি গানে বেশি বাসা করে থাকে। তবে ঝোপ-ঝাড়, লতানো গাছপালার ডালে বাসা তৈরি করে তারা ছানা ফুটিয়ে থাকে। এই প্রজনন মৌসুমে ঢাকা শহরে প্রায় এক হাজার বুলবুলি বাসা তৈরি করে। মতিঝিল, দিলকুশা, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, বারিধারা এসব স্থানের গাছগুলোতে প্রচুর বুলবুলি পাখির বাসা রয়েছে। ’
 
শরীফ খান আরও বলেন, ‘দিনের বেলা পাতিকাক এবং রাতে গেছোইঁদুর, লক্ষ্মীপেঁচা ও খুড়ুলে পেঁচা বুলবুলির পাখির বাসায় হামলা চালাতে পটু। বুলবুলির ছানারা উড়তে শেখার সময় সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়ে। বেশির ভাগ সময়ই পাতিকাক এসে তার উপর আক্রমণ করে মাথা ধরে নিয়ে চলে যায়। এটা অবশ্য প্রাকৃতিরই ভারসাম্যের অংশ। একটু উদ্যোগ নিয়ে বিপাশা গুহঠাকুরতার মতো অন্যরাও নিজ ফ্ল্যাটের কোণে ছানা ফুটানোর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন। বুলবুলির ইংরেজি নাম Red-vented Bulbul এবং বৈজ্ঞানিক নাম Pycnonotus cafer। ’
 

 
বাংলাদেশ সময়: ০২৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।