ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

আম গাছ থেকে ঝরছে মিষ্টি পানি!

সেলিম সরদার, উপজেলা করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪
আম গাছ থেকে ঝরছে মিষ্টি পানি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঈশ্বরদী: ছোট একটি আম গাছ। গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে।

সেই নতুন পাতা বেয়ে শিশির ফোঁটার মতো মাটিতে ঝরে পড়ছে রস! মধুর মতো মিষ্টি এই রসে গাছতলা ভিজে গেছে।

এটি ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়া পদ্মা নদী ঘাটের মসজিদের পাশে একটি আমগাছের দৃশ্য। গত তিন দিন ধরে গ্রামের অসংখ্য মানুষ এই দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন সেখানে ভিড় করছে।

স্থানীয়রা ঘটনাটি অলৌকিক বলে প্রচার করলেও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি নতুন মনে হলেও অলৌকিক নয়।

সাঁড়াঘাট মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহাবুল আলম বাংলানিউজকে জানান, রোববার ফজরের নাম শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখেন গাছের নিচে পানি জাতীয় পদার্থ পড়ে ভিজে রয়েছে। সকালে তিনি দেখতে পান গাছের নতুন পাতা বেয়ে শিশিরের মতো মিষ্টি পানি ঝরছে।

কৃষক সাজদার রহমান বাংলানিউজকে জানান, গাছের নতুন পাতাগুলি বৃষ্টির পানির মতো ভেজা ও এগুলো মুখে দিলে মিষ্টি লাগছে। এরপর থেকে কৌতুহলি অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করেন এবং গাছের পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যান।
 
বৃহস্পতিবার সকালে সাঁড়ার ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ আম গাছটি ঘিরে রয়েছে এবং তারা পাতা ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছেন। এলাকাবাসী জানান, তারা ইতোপূর্বে এভাবে মিষ্টি জাতীয় পানি ঝরতে দেখেনি। ঘটনাটি তাদের কাছে অলৌকিকই মনে হয়েছে।

তবে, ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খুরশিদ আলম বাংলানিউজকে জানান, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আম গাছে শোষক পোকা নামে এক ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণের কারণে এটা হতে পারে। আম উৎপাদনের জন্য এটি উদ্বেগজনক। উপজেলার কয়েকটি আমবাগানে হঠাৎ করেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ঈশ্বরদী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলতাব হোসেন জানান, আম গাছের জন্য এটি একটি নতুন সমস্যা মনে হচ্ছে। গাছে শোষক পোকার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আম গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জমির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সমস্যাটি আম উৎপাদনের জন্য উদ্বেগজনক। সরেজমিনে না গিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

পোকার আক্রমণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস খেয়ে ফেলে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ওই পোকা বংশবৃদ্ধি করে। পোকার দেহ থেকে নিসৃত রস আঠালো ও মধুর মতো মিষ্টি মনে হয়। রসের কারণে আম ও গাছের পাতায় বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগ তৈরির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়।

তিনি আরো বলেন, গাছের আম কালো হয়ে আস্তে আস্তে তা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। এ পোকার আক্রমণ গুটি বা ছোট আমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পোকা আক্রমণের সময়কে শুটি মৌল বলা হয়। বড় আমগাছে এ পোকার আক্রমণ কম হয়। ছোট গাছে প্রভাব পড়ে বেশি।

তিনি আরো বলেন, প্রতিষেধক হিসেবে গাছ বা বাগানে এসিডা কো-পিড জাতীয় ওষুধের যেকোন একটির সঙ্গে পাঁচ মিলি লিটার পানি দিয়ে এবং ম্যানকে জেব জাতীয় ওষুধ প্রতিলিটার পানিতে দুই গ্রাম করে এক সঙ্গে মিশিয়ে ছিটালে ভাল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।