ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

গাছের নাম ‘ঘোড়ানিম’

মোকারম হোসেন, ন্যাচার অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৪
গাছের নাম ‘ঘোড়ানিম’

ঢাকা: স্নিগ্ধ ফুল, চমৎকার পাতা ও ডালপালার জন্য ঘোড়ানিম মোটামুটি সবার পরিচিত। এ গাছকে অনেকেই ভুল করে প্রকৃত নিমগাছ মনে করেন।

কিন্তু নাম প্রায় একই হলেও দুই নিমের মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক। প্রকৃত নিম ঘনবদ্ধ পাতা ও অজস্র ডালপালায় বেশ ঝোপালো থাকে। সে তুলনায় ঘোড়ানিম স্বল্প পাতা ও ডালপালায় কিছুটা বিক্ষিপ্ত। তবে ফুলের ক্ষেত্রে ঘোড়ানিমই (Melia azedarach) রাজসিক।
 
এ গাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, গুচ্ছবদ্ধ হলদেটে ফলগুলো দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকে। তখন খুব সহজেই গাছটিকে আলাদা করে চেনা যায়। প্রচলিত ইংরেজি নাম পার্সিয়ান লাইলাক, হোয়াইট সেডার, চায়নাবেরি ইত্যাদি। আর স্থানীয় নামের মধ্যে গোরানিম, কাউয়ানিম, মহানিম, পুমা, পোয়া ইত্যাদি অন্যতম।
 
বাংলাদেশের উত্তর জনপদে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ঘোড়ানিম। ঢাকায় দেখা যায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেনে। অন্যান্য পার্ক-উদ্যানেও সহজলভ্য। বনানী রেলক্রসিং লাগোয়া রেলপথের ধারে একসারি গাছ আছে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে ঘোড়ানিম।
 
উপহিমালয়ের প্রজাতি ঘোড়ানিম আছে মায়ানমার, চীন ও ইরানে, জন্মে ইউরোপ আমেরিকায়ও। ১৮৩০ সালের দিকে আলঙ্কারিক বৃক্ষ হিসেবে আমেরিকার ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় পৌঁছায়।

মূলত নিমের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যে আত্মিক যোগ আছে ঘোড়ানিমের সঙ্গে ঠিক সেভাবে নয়। কারণ, আমাদের দেশে নিমটাই সহজলভ্য, ঘোড়ানিম মাত্র দুই দশক আগে থেকে লোকালয়ে রোপণ করা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত সুদর্শন পুষ্পবৃক্ষ হিসেবেই এর চাষ হয়ে থাকে। ফুলের সৌন্দর্য নজরকাড়া এবং অনেকটা উপেক্ষিতও বটে। ফুল ঝরে পড়ার পর ফলের নান্দনিকতাও আমাদের মোহিত করে।  
 
ঘোড়ানিম ৮ থেকে ১২ মিটার উঁচু পত্রমোচী গাছ, মাথা ছড়ানো। বাকল ধূসরাভ-বাদামি, কাণ্ডে লম্বা ফাটাফাটা দাগ। যৌপত্র, ২ থেকে ৩ পক্ষল, ৩০ থেকে ৪০ সেমি লম্বা, পত্রিকা ৬ সেমি লম্বা। বসন্তে নিষ্পত্র ডালে ১০ থেকে ২০ সেমি লম্বা ডাঁটায় ছোট ছোট নীলচে বেগুনি বা বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে, পাপড়ি ৫ থেকে ৬টি, মাঝখানে পুংকেশরের একটি গাঢ়-বেগুনি নল আছে। বসন্তের পুষ্পোদ্যানে এ ফুল অনেকটাই ব্যতিক্রম।
 
পরিপক্ক ফল হলুদাভ-বাদামি, ডিম্বাকার, দেড় সেমি লম্বা। বীজ মসৃণ, ৪ থেকে ৫টি। বংশবৃদ্ধি হয় বীজের মাধ্যমে। গাছ ওষুধিগুণ সম্পন্ন। হৃদরোগ, মাথাব্যাথা, কৃমি ও বাতরোগে এ গাছের পাতা, বাকল ও ফল অত্যন্ত কার্যকর। ভারতের পাঞ্জাবে বাত রোগে এবং ইন্দোনেশিয়ায় টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে ঘোড়ানিমের বীজ ব্যবহৃত হয়। এ গাছ থেকে তৈরি নিমতেল ক্ষতিকর পোকা-মাকড় দমনে অত্যন্ত কার্যকর। এর ফল ইন্ডিয়ান গ্রে হর্নবিল পাখির প্রিয় খাবার। এর কাঠ মূলত ক্রীড়াসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।