সৌন্দর্যময়ীই বলা চলে তাকে। সৌন্দর্য রঙের, রূপের, বিরামহীন ডাকের।
একে নীলগলা বসন্ত, ধনিয়া, বড় বসন্তবৌরি, বড় বসন্ত বাউরি এসব নামেও ডাকা হয়। ইংরেজি নাম Blue-throated Barbet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima asiatica। এরা কাপিটোনিডি পরিবারের অন্তর্গত মেগালাইমা গণের এক প্রজাতির ফলাহারী পাখি।
দেশের বরেণ্য বন্যপ্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি নীলগলা বসন্তবৌরির উপস্থিতি চোখে পড়ে। বিভিন্ন বনাঞ্চলে এবং বনাঞ্চলের আশপাশে এদের ঘন ঘন দেখা যায়। তবে লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি মিশ্র চিরসবুজ বনে এদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এদের প্রধান খাদ্য মূলত ফল। বটজাতীয় ফল এদের প্রিয়। মরা গাছের কোটরে এরা বাসা করে করে।
নীলগলা বসন্তবৌরি দৈর্ঘ্য ২২ সেমি. এবং ওজন ৮০ গ্রাম। দেহের প্রায় সমস্ত অংশই গাঢ় সবুজ। মুখ, গলা ও বুকের উপরিভাগ নীল। কপাল গাঢ় লাল এবং চাঁদি কালো। চোখ কালছে বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখির শারীরিক রং অভিন্ন। মার্চ-জুলাই এদের প্রজনন মাস। প্রজনন মৌসুমে মেয়ে পাখিটিকে আকৃষ্ট করতে ছেলেপাখিরা বিরামহীনভাবে গান শুনিয়ে যায়। এরপর ওই গানে মুগ্ধ হয়ে মেয়েটি তার উপযুক্ত ছেলেপাখিটিকে নির্বাচন করে থাকে। সাদা রঙের ৩-৪টি করে ডিম পাড়ে।
নীলগলা বসন্তবৌরি আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সাধারণ একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে অন্যান্য ফলহারী মিশ্র পাখিদের দলে অংশগ্রহণ করে ফল সংগ্রহ করে খায়। হিমালয়ের পাদদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। পৃথিবীতে ২৪ প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে ৫ প্রজাতির ‘বসন্তবৌরি’ পাখি পাওয়া যায়।
রেজাউল হাফিজ রাহী বসন্তবৌরির এই ছবিগুলো তুলেছেন গত বছরের জুন মাসে উত্তর ঠাকুরগাঁও এলাকা থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৪