ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

লাউয়াছড়ায় কালো কাঠবিড়াল!

আসিফ আজিজ ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন; ছবি: নূর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৪
লাউয়াছড়ায় কালো কাঠবিড়াল!

লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: কাঠবিড়ালী কালো হয় এটা জানতাম না আগে। বাংলাদেশ বলে অবাক হয়েছি বেশি।

এত বিরল প্রাণীও আমার দেশে আছে ভেবে খুব ভালো লাগলো! লাল, বাদামি, সাদাসহ কয়েক রঙের কাঠবিড়ালী দেখেছি কলকাতার চিড়িখানায়।

সেদিন ছিল লাউয়াছড়া বনে আমাদের দ্বিতীয় দিন। সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে গৌরাঙ্গের সাতরঙা চায়ের দোকানে আদা চা নিয়ে বসেছিলাম। দিনের আলো তখন মিইয়ে ধূসর। চারপাশের কাঁঠাল বাগান আলোটাকে ম্লান করেছে আরো। সমস্ত গাছজুড়ে কাঁঠাল ফুল আর কচি কাঁঠালের গন্ধ। হঠাৎ চোখ পড়লো গাছের একটি ডালে ছোট্ট একটি প্রাণী বসে কী যেন খাচ্ছে। অস্পষ্ট আলোয় দেখাও যাচ্ছে না ভালো করে। বনে এসেছি। তাই, নতুন কোনো প্রাণীর দেখা পেয়েও যেতে পারি, এ আশায় চা ছেড়ে উঠে পড়লাম।

একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল এটা একটা কাঠবিড়ালী। আর রঙটা অন্ধকারে কালো দেখাচ্ছে না। সত্যিই কালো। পাশে থাকা বিট অফিসার জানালেন, এদের মাঝে-মধ্যে দেখা যায়।

উড়ন্ত কাঠবিড়ালীও আছে। অবশ্য সেটি দেখা যায় খুবই কম। নূর ক্যামেরা বের করে অনেকগুলো ক্লিক করলো। কিন্তু বার বার নড়াচড়া করায় ছবি হলো না। অনেক কষ্টে দু’একটি ছবি কোনো রকম বের করতে পারলো।

কালো এ কাঠবিড়ালীটির প্রধান সৌন্দর্য এর বিশাল লেজ। শরীরের চেয়ে বেশি লম্বা এদের লেজটি। আর সামনের দুপায়ে ধরে যখন ছোট্ট কাঁঠাল ফলটি খাচ্ছিলো তখন দেখতে লাগছিল অসাধারণ!

দেশের বরেণ্য বন্যপ্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, কালো কাঠবিড়ালীর ইংরেজি নাম Orange-Bellied Himalayan Squirrel এবং বৈজ্ঞানিক নাম Dremomys lokriah। .

এদের মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্য ২০ সেমি। লেজের দৈর্ঘ্য ২২ সেমি। আমাদের দেশে এরা মোটামুটি ‌ভালো অবস্থানেই আছে। মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা এরা। অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম এই অঞ্চলের চিরসবুজ বনগুলোতে এদের পাওয়া যায়। তবে সুন্দরবন ও মধুপুরে এদের দেখা পাওয়া যায় না।

কালো কাঠবিড়াল মূলত বিভিন্ন ফল ও গাছের রস বেশি খায়। লতাপাতা দিয়ে বাসাও করে গাছের ওপরে। শারীরিক গঠন এমনিতে বাদামি কাঠবিড়ালীর মতো। তাদের শরীরের বেশিভাগ অংশই কালো। কিন্তু, পেটের নিচের দিকটা কমলা রঙের। তবে সবসময় তাদের পেটের ওই কমলা রঙের অংশটা দেখা যায় না। গাছের ওপরে পেট আড়াল করে বসে থাকে বলে।

মদ্দা ও মাদী উভয় কালো কাঠবিড়ালীর গায়ের রঙ একই রকমই বলা চলে। তবে মাদীটির গায়ের রং কিছুটা কম উজ্জ্বল। মদ্দাটা কুচকুচে কালো হয়। মাদীটি হয় বাদামি কালো। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসীরা এদের শিকার করে খায়। তবে সিলেটের আদিবাসীরা এদের খায় না বলে জানি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।