ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিপন্ন মুখপোড়া হনুমানের দেখা

আসিফ আজিজ ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন; ছবি: নূর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৪
বিপন্ন মুখপোড়া হনুমানের দেখা

লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: লাউয়াছড়ায় গিয়ে এক উল্লুকের পিছে ছুটতে ছুটতে দেখা পেয়েছি অনেক প্রাণীর। সেগুলোর কোনোটি ছিল কালো কাঠবিডালের মতো একেবারে অপ্রত্যাশিত।

কারণ আগেই শুনেছি ভাগ্য ভালো থাকলে দু’একটি বানর দেখা যায়। আর অন্য কোনো প্রাণীর দেখা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের।

তবে আমাদের ভাগ্যদেবী হেসেছেন তিনদিনই। কষ্ট বৃথা যায়নি। তৃতীয় দিন শীতের রোদেলা সকালে গিয়ে ঢুকলাম লাউয়াছড়া বনবিটের অফিসে। বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ চাপালিশ গাছে নড়াচড়ার শব্দ পেলাম। যেন কেউ বসে বসে ডাল ভাঙছে। বুক কেঁপে উঠলো। উল্লুক নাকি! পাশ থেকে বিট কর্মকর্তা বললেন, হতে পারে। দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম উল্লুক না, তবে এ বনে দেখা নতুন প্রাণী মুখপোড়া হনুমান।


একটি দুটির দেখা মিলতে মিলতে দেখা পেলাম বড় এক দলের। তবে খুব সতর্ক এরা। ক্যামেরার ফ্রেমবন্দি করা বেশ কষ্টসাধ্য। শুধু লাফিয়ে লাফিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ঘুরে বেড়ায়। পোড়া মুখের দেখা পাওয়া আরও কষ্টসাধ্য। যেন মুখ দেখাতে যত লজ্জা। সত্যি পাতার ফাঁক দিয়ে তাদের মুখ দেখতে বেশ বেগ পেতে হলো।

দেশের বরেণ্য বন্যপ্রাণি গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, মুখপোড়া হনুমানের ইংরেজি নাম Capped Leaf Monkey এবং বৈজ্ঞানিক নাম Trachypthecus pileatus। বাংলায় এদের লাল হনুমানও বলে। মুখপোড়া হনুমানের মুখটা কালো, পিঠের দিকটা ধূসর এবং পেটের দিকটা কিছুটা কমলা। এদের মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্য ৬৫ সেমি.। লেজের দৈর্ঘ্য ৯১ সেমি.।


তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিপন্ন মুখপোড়া হনুমান। আইইউসিএন এর ইন্টারনেশনাল রেডলিস্ট-এ এর নাম রয়েছে। বাংলাদেশে বিপন্ন হলেও এদের সংখ্যা মোটামোটি ভালোই আছে। যশোরের কেশবপুরের হনুমান এবং চশমাপরা হনুমানের চেয়ে সারা বাংলাদেশে মুখপোড়া হনুমানের সংখ্যা বেশি। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, মধুপুরের শালবন, রাঙামাটির কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান প্রভৃতি স্থানে এদের পাওয়া যায়।


ড. মনিরুল বলেন, মুখপোড়া হনুমান পাতা, ফুল ও ফল খায়। মাঝে মধ্যে পোকামাকড়, পাখির ডিম এগুলো খায়। এরা মূলত নিরামিষভোজী। এরা মোটামুটি বড়-সড় দলে বাস করে। ওই দলের নেতৃত্ব দেয় একটা পুরুষ মুখপোড়া হনুমানই। একটা দলে অনেকগুলো  মেয়ে মুখপোড়া হনুমান থাকে। ওই পুরুষটিই প্রজনন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। এই পুরুষটিকে‌‌‌ ‌‘আলফামেল’ বলে। অর্থাৎ মোগলদের হেরেমের মতো। একে প্রজনন পুরুষও বলা যায়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষটি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষে রূপান্তরিত হয় তখন দলের ওই একমাত্র নেতৃত্বদানকারী ‌‘আলফামেল’টি সদ্যপ্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষটিকে দল থেকে বের করে দেয়। দল থেকে বহিষ্কৃত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষটি আবার কোনো দলের দুর্বল আলফামেলকে যুদ্ধে পরাজিত করে ওই দলের দখল নেয় এবং আলফামেলের নেতৃত্বের চলে আসে।

ড. মনিরুল খান আরও বলেন, মুখপোড়া হনুমান চশমাপরা হনুমানকে কিছুটা ভয় পায়। কারণ চশমাপরা হনুমান ভয়ংকর শব্দ করে করে। সংরক্ষিত বনগুলোর বৃক্ষনিধন ও আবাসস্থল ধ্বংস মুখপোড়া হনুমানদের বেঁচে থাকার জন্য গভীর উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।