ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী, প্রথম উপজেলা নির্বাচনের অপেক্ষায়

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪
দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী, প্রথম উপজেলা নির্বাচনের অপেক্ষায়

বাহেরচর, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী থেকে: সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনের ডামাঢোলের সঙ্গে তাল রেখে প্রথম উপজেলা নির্বাচনের অপেক্ষায় দেশের সর্বদক্ষিণে জেগে থাকা দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় তিন বছর আগে উপজেলা ঘোষণা হলেও এ উপজেলা পরিচালনায় এখনও আসেনি জনগণের প্রতিনিধি।

নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ভোটে পছন্দের জনপ্রতিনিধি চান এলাকার ভোটাররা।

২০১১ সালের ১৩ জুন উপজেলা ঘোষণার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রথমবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও সে নির্বাচনে এলাকার ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কারণ, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।   

সূত্র বলছে, ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন হলেও রাঙ্গাবালীর উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতাসহ কোনো সমস্যা না থাকা সত্বেও কেন এখানে নির্বাচন হচ্ছে না, সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাঙ্গাবালীর সর্বত্র।

ভোটারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সর্বশেষ খবরটি জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।   

রাঙ্গাবালীর প্রত্যন্ত এলাকা সরেজমিন ঘুরে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব জানতে পারে বাংলানিউজ। তারা অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান। এলাকার উন্নয়নের জন্য, রাঙ্গাবালীবাসীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, সরকারি সেবা পাওয়ার জন্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

তারা মনে করেন, উপজেলা পরিষদে ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলে এলাকাবাসী সব দিক থেকে উপকৃত হবেন।  

রাঙ্গাবালীর বাহেরচর, বড় বাইশদিয়ার তক্তাবুনিয়া, মৌডুবি, মধুখালী, চরগঙ্গাসহ বিভিন্ন হাট-বাজার কিংবা গ্রামের চায়ের দোকানে সব শ্রেণীর মানুষ দিন গুণছে কবে উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। ওইসব এলাকার চাষি, জেলে, ব্যবসায়ী যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, সবাই বলেছেন উপজেলা নির্বাচন রাঙ্গাবালীকে উন্নয়ন দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারে।  

বাহেরচরের ভোটার বাবুল গাজীর পেশা কৃষিকাজ। অন্য সবার মতো তারওে প্রশ্ন কেন উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অনেক দাবির পর এই জনপদের মানুষ উপজেলা পেয়েছে। এখন কথা বলার তো লোক নেই। নির্বাচন হলে জনপ্রতিনিধি পাব। সমস্যার কথা বলার লোক পাব।

চায়ের দোকানে আড্ডার সময় বাবুল গাজীর কথার সূত্র ধরে অনেকেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তারা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী উৎসবের আমেজ এখানে লাগেনি। ভোটকেন্দ্রে যেতে হয়নি ভোটারদের। প্রথম উপজেলা নির্বাচনে এখানকার মানুষ উৎসবের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যেতে চান। নির্বাচিত করতে চান পছন্দের প্রার্থী।

আলাপের সময় একজন ভোটার বলেন, পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যের বাড়ি কলাপাড়ায়। এই দ্বীপ জনপদে তার পা পড়েছে খুব কম। ফলে, এখানকার মানুষ কাছে পাচ্ছে না জনপ্রতিনিধিকে। উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারলে সে ঘাটতিও অনেকটা পূরণ হবে।

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বাংলানিউজ কথা বলেছে রাঙ্গাবালীর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে। অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এখানকার রাজনৈতিক দল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নির্বাচন হলে রাঙ্গাবালীর উন্নয়ন অনেকটা এগোবে বলে মনে করেন তারা।

রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল মালেক মিয়া বলেন, উপজেলা নিয়ে এখানকার মানুষের অনেক আশা-ভরসা। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ঘোষণা হয়েছে, এখানকার মানুষের পূর্ন স্বস্থির জন্য নির্বাচন দেয়া অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচন হলে প্রশাসন মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে যাবে।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলাপ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন আকন বলেন, উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে এখানকার মানুষ জনপ্রতিনিধি পাবে। জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন ঘটবে। আর সে কারণে অবিলম্বে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা উচিত।  

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে এখন চলছে গঠনের কাল। নতুন নতুন ভবন উঠছে। একে একে স্থাপিত হচ্ছে সব সরকারি দপ্তর। এই দ্বীপে প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। এরপর থেকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের সব আয়োজন চোখে পড়ছে।

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন তো শেষ হয়ে যায়নি। এসএসসি পরীক্ষা সমাপ্ত হলে শেষ পর্যায়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাচন হতে পারে।

পরিসংখ্যান বলছে, পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণে দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে লোকসংখ্যা এক লাখ চার হাজার ১২৮ জন। উপজেলাটি রাঙ্গাবালী, বড় বাইশদিয়া, ছোট বাইশদিয়া,চালিতাবুনিয়া ও চর মোন্তাজ এই পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

বাংলাদেশ সময় ০১১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad