ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

গড়াই তীরের পাকরা মাছরাঙা

সৌরভ মাহমুদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪
গড়াই তীরের পাকরা মাছরাঙা

ঢাকা: ফকির লালন সাঁইয়ের তীর্থভূমি কুষ্টিয়া জেলার বুক ছুঁয়েই বয়ে চলেছে গড়াই নদী। গঙ্গার স্বাদু জলের প্রবাহ ও উর্বর পলি গড়াই নদীর দু’পাশের ভূমিতে জন্মানো নানাবিধ গাছপালার পুষ্টি যোগায়।

কৃষকের মুখে হাসি ফোটায় ক্ষেতভরা ফসল ফলিয়ে। স্বাদু জলের এ নদীর তীরধরে গড়ে ওঠা সমাজ সভ্যতায় সবুজ বৃক্ষরাজির রয়েছে বহুল। এ সব গাছাপালার ডাল-পালায়, নদীর চরে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে নানা প্রজাতির পাখি।

বাংলাদেশের একটি বিপন্ন পাখি নদী টিটির সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এ নদীর  চরে। এ পাখি নিয়মিত বাসা করে বংশবৃদ্ধি করে এ নদীর বেলাভ‍ূমিতে।   ১২ প্রজাতির মাছরাঙা পাখির বাস আমাদের দেশে। এসব প্রজাতির মধ্যে একটি হলো পাকরা মাছরাঙা (Pied Kingfisher)। পাকরা মাছরাঙা গড়াই নদীর জলে নিয়মিত ডুব দিয়ে মাছ ধরা একটি পরিচিত পাখি। মিঠা পানির এ নদী পাকড়া মাছরাঙার অতি প্রিয় আবাস।

নদী, ঝিল, পুকুর বা জোয়ারের জল জমে থাকা সরু খাড়িতে, জলের ধারের গাছের ডালে বসে এ পাখিরা মাথা দোলায় ও লেজ নাচায়। উড়তে উড়তে বেশ উৎফুল্ল সুরে তীক্ষè গলায় ডাকে চিরাঁক্ চিরাঁক্ শব্দে। এ ডাক একবার শুনলে আর ভোলার নয়। অনেক দূর থেকে ডাকের শব্দ শোনা যায়।

পাকরা মাছরাঙার শিকার ধরার প্রক্রিয়াটি দর্শনীয় ব্যাপার। জলের উপর দিয়ে উড়তে উড়তে ওরা সবসময় দক্ষ  নজর রাখে নাগালের মধ্যে কোনো ছোট মাছ দেখা যাচ্ছে  কিনা। মাছের দেখা পেলেই ওড়া বন্ধ করে একেবারে স্থির হয়ে  শুন্যে দাঁড়িয়ে পড়ে, সমস্ত দেহটি খাঁড়া ও সোজা রেখে। এ প্রক্রিয়াটি ডানার পালকের সঞ্চালনের উপর ভর করেই হয়। একে বলা হয় হোভারিং। ব্যাপারটি দেখলে মনে হবে লেজের ওপর ভর দিয়ে শুন্যে ঝুলছে পাখিটি।
 
এ সময় ওরা দ্রুতবেগে পাখা সঞ্চালন করে এবং ঠোঁট একেবারে প্রস্তুত থাকে শিকার ধরার জন্য। তারপর শিকার একুট নাগালের মধ্যে এলেই, পাখা সঞ্চালন বন্ধ করে প্রায় ৬-৪ মিটার ওপর থেকে সোজা জলের মধ্যে ডুব দিয়ে শিকারকে ঠোঁটে চেপে ধরে আবার ভেসে ওঠে। তারপর গা ঝাড়া দিয়ে পালকের জল ঝেড়ে ফেলে উড়ে গিয়ে বসে  কাছাকাছি কোনো গাছের পালে পা ধারকের উপর। তারপর ধীরে ধীরে মাছটিকে গিলে ফেলে।

পাকরা মাছরাঙা সারা দেহে সাদা কালো ফোটা ওয়ালা জলাচর পাখি। মাথায় কালো চাঁদি ও ঝুঁটিতে সাদা ডোরা থাকে। পর্থাক্যসূচক শুধু সাদা ভ্রু ও চোখের প্রশস্ত কালো ডোরা আছে। ডানায় ও লেজের পালক কালো ও সাদা বর্ণ  মিশানো, দেহতল সাদা। ছেলে পাখির বুকে দুটি কালো ফোটা কিন্তু মেয়ে পাখির কেবল একটি ভাঙা ফোটা থাকে। পাটল বর্ণের মুখসহ ঠোঁট বাদামি কালো। চোখ বাদামি এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর বাদামি কালো মেশানো। সাধারণত জোড়ায় থাকে। মাছই এ পাখির প্রধান খাবার। তাছাড়া খাবার তালিকায় আছে ব্যাঙ, ব্যঙাচি ও জলজ পোকা-মাকড়।

অঞ্চলভেদে তারতম্য ছাড়া সারা বছরই এ পাখির প্রজনন সময়। এ সময় পুরুষ পাখি মেয়ে পাখিকে সজোরে ডেকে ডেকে আকৃষ্ট করে ভাব জমায়। ভাব শেষে প্রেম,  তারপর  বাসা বেঁধে সংসার। নদী ও  প্রবাহমান জলার ধারে ১.৫ মিটার দীর্ঘ ও ৭-৮ সেমি চওড়া সুড়ঙ্গ করে সমতল বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। বাসায় কোনো আস্তরণ থাকে না। তবে ভুক্তাবশিষ্ট মাছের কাঁটা ছড়ানো থাকে প্রচুর।   ডিমগুলি  চকচকে সাদা, সংখ্যায় ৫-৬ টি। স্ত্রী-পুরুষ মিলেই ডিমে তা দেয়া থেকে সন্তান পরিচর্চার দায়িত্ব পালন করে। পাখিটি কোথাও সাদা কালো মাছরাঙা ও ডোরা মাছরাঙা নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের সব বিভাগের নদী, খাল, পুকুর, জলাধার, জোয়া-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি, ডোবায় ও অন্যান্য জলাশয়ে এ পাখি দেখা যায়।

ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজিপুর, মানিকগঞ্জ জেলার গ্রাম এলাকায় এ পাখির দেখা সবচেয়ে বেশি পেয়েছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ ও খাগড়াছড়িতে গিয়েও পাখিটিকে দেখেতে পেয়েছি।

পরিবেশ-জীবেবৈচিত্র্য পাতায় লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।