ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

অমান্যই মান্য লাউয়াছড়া বনে

আসিফ আজিজ ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন; ছবি: নূর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪
অমান্যই মান্য লাউয়াছড়া বনে

লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: ১২শ’ ৫০ হেক্টরের সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া। ছায়াঘেরা বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ আর নানা ধরনের প্রাণী এ বনের শোভা।



বন্যপ্রাণীরা সাধারণত থাকতে চায় নিভৃতে, নিরাপদে। বেশি মানুষের পদচারণা, হৈচৈ মোটেও পছন্দ নয় তাদের। আর পছন্দ না হওয়ার অন্যতম কারণ, মানুষ বন ও বনের প্রাণীদের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে।

এর প্রমাণ আপনি পদে পদে পাবেন লাউয়াছড়া বনবিটে। উদ্যানে ঢোকার পথে সাঁটানো সাইনবোর্ডে দেখতে পাবেন নানা নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। তবে ভেতরে ঢুকে চোখে পড়বে এর উল্টো চিত্র। নিষেধ মানা নয়, সবাই যেন নিষেধ ভাঙায় মত্ত, সব অমান্যই এখানে মান্য!

সমস্যা গোড়াতেই। যারা এই বিটের রক্ষক, তারাই প্রতিনিয়ত ভাঙছেন নিষেধাজ্ঞা। ভাবখানা এমন আমরা করছি, তোমরাও করো!

প্রমাণ মিলবে বনবিভাগের অফিসের সামনের চত্বরগুলোতে। রেললাইন ঘেঁষে গাছে পেরেক দিয়ে সাঁটানো সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের ছবিওয়ালা ফেস্টুন। ট্যুরিস্ট শপটি চেনানোর জন্য বনবিভাগের অফিসের ঠিক সামনের আরেকটি গাছের অবস্থাও ঠিক একই। অথচ গাছে পেরেক মেরে কিছু টাঙানো বা ঝোলানো আইনত নিষিদ্ধ।

এ ব্যাপারে কথা হলে বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সব জায়গায় তো সব কিছু ইচ্ছে হলেও করতে পারি না। কি করবো বলেন। আইন তো সবার জন্য সমান না।

একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেলো মাঠের মধ্যে যত্রযত্র ছড়ানো-ছিঁটানো চিপস, বিস্কিটসহ বিভিন্ন ধরনের পলিথিনের খালি প্যাকেট। দোকানও রয়েছে দু’টি। অথচ প্রবেশ পথেই লেখা রয়েছে এসব এড়ানোর জন্য। কারণ মাটি ও পরিবেশের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর।

এসব দেখার লোক না থাকলেও হাস্যকর ভাবে রয়েছে এসব আবর্জনা পরিষ্কার করার লোক!

লাউয়াছড়ায় রয়েছে নয় প্রজাতির বাঁশ। বরাক, পারুয়া, কান্তা, মিটিংগা, বাইজ্জা, ডলু বাঁশ এর মধ্যে অন্যতম। প্রবেশ মুখে বাঁশের গায়ে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে লেখা বা আঁকা নিষেধ লেখা থাকলেও বন্ধু বা  প্রেমিক-প্রেমীকার‍া সব ভালোবাসা যেনো উগরে দিয়েছেন বাঁশের সবুজ শরীরে। তাদের ভালোবাসায় ক্ষত-বিক্ষত বাঁশের শরীর। এ তালিকায় সাধারণ মানুষও কম নেই। মনের কবিত্বের প্রকাশ কম করেননি তারাও!

প্রাণীদের অভয়ারণ্য এ জাতীয় উদ্যানে পর্যটন অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মানুষের অতিরিক্ত আনাগোনায় এখন আর আগের মতো কোনো প্রাণীর দেখা মেলে না। বনের ভেতরে হৈচৈ, চিৎকার নিষেধ থাকলেও টারজানের মতো নানা ধরনের শব্দ তৈরির খেলা যেনো মনে আসে এখানে এলেই।

এছাড়া সামান্য অর্থ আয় করতে গিয়ে বনবিভাগ অনুমতি দিচ্ছে নাটক, সিনেমার শুটিংয়ের। এতে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চ শব্দ বনের প্রাণীদের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে।

বিট কর্মকর্তাদের যুক্তি, পিকনিক ও মানুষের বিচরণের জন্য এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইল রয়েছে। সেখান দিয়েই শুধু লোকজন চলাচলের অনুমতি রয়েছে।

কিন্তু সত্য হলো, এই স্বল্প এলাকায়ও কম প্রাণীর বসবাস নয়। মানুষ নানাভাবে এদের বিরক্ত করতে পিছপা হয় না।

তবে বিট কর্মকর্তা মনির বলেন, আমরা চাই এখানে কেউ না আসুক। বনের প্রাণীরা তাদের মতো থাকুক। সমগ্র পরিস্থিতিতে মুক্তির একটিই পথ রয়েছে, সেটা মানুষ না আসা। কারণ মানুষ এলেই এখানে নানা ধরনের ঘটনা ঘটবে, তারা নানা সমস্যা করবে। আর সব সমস্যা আমাদের সামান্য ক’জন মানুষ দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়।

নিয়ম, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা দেখ-ভালের উদ্যোগ নেই সরকারের। লোকবল বাড়ানো ছাড়া এটা সম্ভব নয়। তাই এসব সমস্যা সমাধানে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে সরকার ও বন বিভাগকে। পরিবেশবাদীরা সচেতনা বাড়াতে পারবে মাত্র।

লাউয়াছড়ায় আগত দর্শনার্থীদেরও সচেতন হতে হবে। তবেই সম্ভব বনের পরিবেশ ঠিক রাখা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।