ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাগেরহাটে ভাসমান নৌকায় ‘ডলফিন মেলা’

ইনজামামুল হক, ডিস্টিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪
বাগেরহাটে ভাসমান নৌকায় ‘ডলফিন মেলা’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাট: ‘আমাদের গর্ব আমাদের ডলফিন, সময় থাকতে রক্ষায় মন দিন’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ডলফিন ও তিমি সুরক্ষায় পূর্ব সুন্দরবন এলাকার জেলে ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ব্যতিক্রমধর্মী এক ডলফিন মেলা শুরু হয়েছে।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (WCS) উদ্যোগে মাসব্যাপী আয়োজিত এ ‘ডলফিন মেলা’ এখন বাগেরহাটে।



বাগেরহাট শহর সংলগ্ন ভৈরব নদীর মাঝিঘাটে প্রদর্শনীর শেষদিনে রোববার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঢল নামে।

বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণি ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণে কাজ করে আসা এ সংস্থাটি সুন্দরবন এবং উপকূলীয় এলাকার নদীতে শুশুক, ইরাবতি (এক প্রজতির ডলফিন) এবং  তিমি সুরক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।

সম্প্রতি সরকার সুন্দরবনের চাঁদপাই, দুধমুখী ও ধানমরি এলাকার উপক‍ূল, মোহনা এবং সাগরজুড়ে বিস্তৃত ১২০ কিলোমিটার এলাকায় Shetland এর (ডলফিন, তিমি ও পারপয়েস) বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্যের কারণে ‘গ্লোবাল হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করার পর সংগঠনটি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ কার্যক্রম শুরু করে।

সোসাইটির এডুকেশন ও রিচার্জ কো-অর্ডিনেটর ফারহানা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, জেলেদের জালের কারণে এবং সুন্দরবন ও উপকূলীয় সাগর এলাকায় পানিতে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকায় প্রতিনিয়ত এ স্তন্যপায়ী প্রাণিগুলোর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। শুধু সুন্দরবন পূর্ব বন এলাকায় প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ডলফিন জেলেদের জালে বা চরে আটকে মারা যায় বলে জানান তিনি।



ফারহানা আরো বলেন, ধারাবাহিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সুন্দরবন ও সাগরে আসা জেলে, সংলগ্ন এলাকার গ্রামীণ মৎস্যজীবী, শিশু কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরাই এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।

তিনি জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি মংলায় প্রদর্শনী মাধ্যমে শুরু হয় তাদের এ ‘ডলফিন মেলা’। রোববার রাতে প্রদর্শনী নৌকাটি বাগেরহাট ত্যাগ করবে। বাগেরহাটে প্রদর্শনী শেষে নৌকাটি জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, বরিশালের তুষখালি হয়ে খুলনার গিয়ে শেষ হবে।

বাগেরহাট, বরিশাল এবং খুলনার সুন্দরবন ও উপকূলবর্তী মোট ১৫টি স্থানে স্বচেতনতামূলক এ কর্মসূচি আগামী ২ মার্চ খুলনায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে শেষ হবে বলে আয়োজক সূত্র জানিয়েছে।

ব্যাতিক্রমী এই কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে রোববার বিকেলে বাংলানিউজ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক এলিজাবেথ ফাহর্নি মনসুর।
 
তিনি বলেন, গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগর উপকূলে এ প্রাণি নিয়ে গবেষণা করছেন।   ভাসমান নৌকায় তাদের এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পাশাপাশি জেলেদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারা। এর মাধ্যমে জেলেদের জানানো হচ্ছে এ ধরনের প্রাণি কোনো মাছ নয়। এসব প্রাণি আমাদের মতোই স্তন্যপায়ী। শুশুক, ইরাবতিরা আমাদের নদীর ডলফিন। এরা মানুষের মত বাচ্চা জন্ম দেয়, বাচ্চাকে দুধ পান করায় ও লালন পালন করে।
 
এলিজাবেথ বলেন, তাদের এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দরবন এবং সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের প্রশিক্ষণের পর তাদের কাছে জিপিএস ডিভাইজ তুলে দিচ্ছেন। যা দিয়ে বিভিন্ন সময় জেলেরা নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বিপদাপন্ন ডলফিন ও তিমি রক্ষা করতে পারবেন।

সরেজমিনে ভাসমান এ প্রদর্শনী কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছে ডলফিনের কংকাল, দাঁত, ছবির মাধ্যমে ডলফিন ও তিমি চেনার উপায়, বিভিন্ন ধরনের ডলফিনের প্রতিকৃতি, ডলফিন রক্ষায় করণীয় বিষয়ক মতামত।

সুন্দরবনে ডলফিনের তিনটি অভয়ারণ্যের মানচিত্র, মানুষের সঙ্গে স্তন্যপায়ী এই প্রাণীর সম্পর্ক ও সাদৃশ্য বিষয়ক তথ্যচিত্র, এদের জীবনযাত্রা ও উপকারী কার্যক্রম বিষয়ক তথ্য।



দিনব্যাপী শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল প্রদর্শনী। মেলায় আসা শিক্ষার্থীদের এ সময় বিনামূল্যে প্রদান করা হয় সচেতনামূলক বিভিন্ন লিফলেট ও বই।

মেলা দেখতে আসা বাগেরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কৌশিক দাস আকাশ বলে, মেলায় আসতে পেরে সে ভীষণ খুশি। এখানে এসে অনেক তথ্য জানতে পেরেছে, যা সে আগে জানতো না। ডলফিন পানির নিচে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না। পানির ওপরে উঠে ডলফিনকে শ্বাস নিতে হয়। ডলফিন, শুশুক যে মাছ নয় তাও তার আজই জানা হল।

শহরের জাহানাবাদ বালিকা বিদ্যলয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত আক্তার জানায়, সে এখানে এসে জানতে পেরেছে সাগর থেকে বিভিন্ন সয়ম ডলফিন আমাদের পাশে থাকা ছোট ছোট নদী-খালে ঢুকে পড়ে।

প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক এলিজাবেথ ফাহর্নি মনসুর বাংলানিউজকে এই প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থী এবং জেলেদের ব্যাপক সম্পৃক্ততায় সন্তোষ প্রকাশ করে সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
 
কোথাও মৃত পাওয়া গেলে বা জীবিত ডলফিন আটকে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ০১৬১২২২৮৮০০ এবং ০১৭১৩২২৮৮০০ নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানান আয়োজকরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।