ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

কলকালিমুখর জাবির পাখিমেলা

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন ‘স্লোগানে শুক্রবার দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাখিমেলা-২০১৪।

মেলা উপলক্ষে সারাদেশ থেকে আগত পাখিপ্রেমীদের পদচারণায় ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন লেকে পরিযায়ী ও দেশীয় যাযাবর পাখির কিচির-মিচির গুঞ্জন। কেউ ভেসে বেড়াচ্ছে, কেউ দিচ্ছে জলডুব, কেউ ব্যস্ত খাদ্যের সন্ধানে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা বাইনোকুলার দিয়ে লেকে মুক্ত বিহঙ্গ দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন।


সবুজ ক্যাম্পাসের নির্জনতায় প্রতিবছর নতুন মাত্রা আনে পরিযায়ী পাখিরা। সরালি, বিভিন্ন প্রজাতির বক, পানকৌড়ির খুনসুঁটি মুগ্ধ করে ক্যাম্পাসে আসা পাখিপ্রেমীদের।

পাখিদের দলবেঁধে চরে বেড়ানো, হঠাৎ শব্দে সচকিত আকাশে ডানা ভাসানো তৈরি করে চমৎকার আবহের। তাই প্রতবিছর দেশের সব মানুষের জন্য আয়োজন করা হয় পাখিমেলা।

পাখি মেলায় আগত দর্শনার্থীসহ সব আলোচকই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার উপর গুরুত্তারোপ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে জহির রায়হান মিলনায়তন চত্বরে সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান অতিথি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মতিন পাখিমেলা উদ্বোধন করেন।


পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অপরূপ চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে। বক্তব্য রাখেন মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজেদা বেগম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান।


উদ্বোধনী ভাষণে উপাচার্য বলেন, অব্যাহতভাবে বন উজাড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের ফলে পরিবেশ ও প্রকৃতি আজ হুমকির সম্মুখীন। পাখির এগারো শতাংশ প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে। পাখিমেলা আয়োজনের মধ্যদিয়ে মানুষের কাছে এই সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা পৌঁছানো যায়।

তিনি বলেন, পরিবেশ, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে সমাজ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতির কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। বন্যপ্রাণি, পাখি আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। এ জন্য পরিবেশকে বাঁচাতে পশু-পাখি ভালোবাসতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বাচাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


সভাপতির ভাষণে অতিরিক্ত সচিব ড. অপরুপ চৌধুরী বলেন, সরকার বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন ২০১২ তৈরি করেছে। এ আইনের সুফল হিসেবে দেশব্যাপী প্রকৃতিবান্ধব এক পরিবেশ গড়ে উঠবে।

তিনি বলেন, সরকার, গণমাধ্যম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ ভূমিকায় মানুষের মধ্যে প্রকৃতি, পাখির প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে, সচেতনতা বেড়েছে।

প্রধান বন সংরক্ষক তার ভাষণে পাখিমেলা আয়োজনের জন্য প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে সাধুবাদ জানান ও এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে এবারই প্রথম ‘বিগ বার্ড অব দ্যা ইয়ার ২০১৪’ সম্মাননা দেওয়া হলো। বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় পাখি দেখার জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তা মনির খান ও তার স্ত্রী তানিয়া খান প্রথম, রেজাউল হাফিজ দ্বিতীয় এবং কিরণ খান তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মেলায় রয়েছে ছোটদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই-পোস্টার প্রদর্শনী, সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাখি দেখা, পাখি চেনার প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠান।

এবারের মেলায় সহযোগী সংগঠন হিসেবে থাকছে ‘বন অধিদপ্তর’, ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’, আইইউসিএন, ‘আরণ্যক ফাউন্ডেশন’ ও ‘ডব্লিউ আর সি’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।