ফড়িং এর নতুন তিনটি প্রজাতি শনাক্ত করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফড়িং এর ওপর গবেষণা করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রাণী গবেষক ড. কবিরুল বলেন, এক সময় দেশে শতাধিক প্রজাতির ফড়িং ছিল এবং এ কারণে প্রায় সব অঞ্চলেই ফড়িং চোখে পড়তো। কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা ও প্রজাতি অনেক কমে গেছে।
ফড়িং এর জন্ম পানিতে। পূর্ণাঙ্গ ফড়িং পানিতে ডিম পাড়ে আর সেখানেই এর বাচ্চা (নিম্ফ) বড় হয়। যখন ফড়িং পূর্ণাঙ্গ হয় তখন তারা পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ ফড়িংকে সাধারণত পানির কাছাকাছি দেখা যায়। প্রজাতিভেদে এরা ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। পৃথিবীতে ১৪টি পরিবারের প্রায় ৫৬৮০ প্রজাতির ফড়িং দেখা যায়।
ফড়িং এর কোনো ক্ষতিকর দিক নেই, এরা দংশন করে না বা হুল ফোটায় না। পূর্ণাঙ্গ ফড়িং এবং বাচ্চা উভয়ই মানুষের জন্যে উপকারি। ফড়িং নানা ধরনের ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফড়িং এর বাচ্চা পানির বিভিন্ন ধরনের পোকা বিশেষ করে মশার লার্ভা খেয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় পূর্ণাঙ্গ ফড়িং উড়তে উড়তে শিকার করে।
ফড়িং এর উপকারি দিক সম্পর্কে ড. কবিরুল বলেন, থাইল্যান্ড এ ডেঙ্গু মশা দমনে ফড়িং সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফসলের ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর পোকা দমনে ফড়িং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলকারখানা, বাসা বাড়ির বর্জ্য, ফসলের ক্ষেতে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক ফড়িং এর জন্মস্থান পানি দূষিত করছে। এ কারণে এই উপকারি পতঙ্গ হুমকির সম্মুখীন। একটি অঞ্চলের পরিবেশ কতটুকু ভাল তা এই পতঙ্গের সংখ্যা দিয়ে ধারণা করা যায়। যে অঞ্চলে এই পতঙ্গ বেশি সেই অঞ্চলের পরিবেশ তত ভাল।
অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে প্রজাপতি ও পাখির মত ফড়িংও বিভিন্ন দেশে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। সৌন্দর্যের কারণে ফড়িং জাপানের শিল্পকলার একটি জনপ্রিয় বিষয়। এই প্রাণী বৈজ্ঞানিক গবেষণারও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ড. কবিরুল বাশারের গবেষণায় শনাক্ত নতুন প্রজাতির তিন ফড়িং
১) ইংরেজী নাম: Emerald Spread wing, বৈজ্ঞানিক নাম: Lestes elatus, গোত্র (Family): Lestidae ।
আবাসস্থল: এ প্রজাতির ফড়িং পানির ট্যাঙ্কে, পুকুর এবং অন্যান্য জলাশয়ে প্রচুর দেখা যায়। সাধারণত বিভিন্ন গাছে এরা ডানা মেলে বসে।
যদিও এরা কম উড়তে পারে, কিন্তু এদের ধরা খুব কঠিন। এরা খুবই সতর্ক। সারা বছরই এদের দেখা যায়। তবে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঘাসে এদের প্রচুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনা জেলায় এই প্রজাতির ফড়িং দেখা যায়।
২) ইংরেজী নাম: Brown Bush Dart: বৈজ্ঞানিক নাম: Copera chantaburii, গোত্র (Family): Platycnemididae
পাহাড়ি জলাশয়ে এদের দেখা যায়। বৃষ্টির জমে থাকা পানি কিংবা স্রোতহীন অগভীর জলাশয়ে এদের জন্ম। সারা বছরই এদের দেখা যায়।
সাধারণত মৌলভীবাজার, বান্দরবান জেলায় এই প্রজাতির ফড়িং চোখে পড়ে।
৩) ইংরেজী নাম: Common Bush Dart:, বৈজ্ঞানিক নাম: Copera ciliata, গোত্র (Family): Platycnemididae
পুকুর, ড্রেন, নর্দমার একটি অতি পরিচিত ফড়িং এরা। বৃষ্টির জমে থাকা পানি কিংবা স্রোতহীন অগভীর জলাশয়ে এদের জন্ম। সারা বছরই এদের দেখা যায়।
জুন-অক্টোবর মাসে এদের বেশি চোখে পড়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও মৌলভীবাজার জেলায় এদের দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৪