মৌলভীবাজার: বন্দুকের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সহজাত। তবে সব আকর্ষণের ধরন ও প্রকারভেদ এক নয়।
অন্যদিকে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন যারা নেহাতই কৌতূহলবশত ‘এয়ারগান’ নামক বন্দুকটি কিনে ‘সৌখিন শিকারি’ সেজে ক্রমাগত পাখি শিকার করে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করেন।
এমন মানুষদের বিষয়ে আমাদের এখন ভাববার সময় এসেছে। হালকা ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ুনির্ভর অস্ত্রের নাম ‘এয়ারগান’। এই বন্দুকটি কিনতে কোনো প্রকার লাইসেন্স প্রয়োজন হয় না বলে যে কেউই এটি কিনে পাখি শিকারের কাজে নেমে পড়েন। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার চা বাগান ও পাহাড় সংলগ্ন আদিবাসীরা কিছু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাখি এয়ারগান তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহার করেন।
এয়ারগানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা হয় দেশের স্বনামধন্য পাখি ও বন্যপ্রাণী গবেষক শরীফ খানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, দু’বছর আগে এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তার ব্যবহার এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্রের দোকানগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সহজলভ্য এয়ারগান। লাইসেন্সের কোনো প্রয়োজন হয় না বলে যে কেউই এটি কিনতে পারেন।
শরীফ খান বলেন, এয়ারগানের অবাধ ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামাঞ্চল, পাহাড়ি জনপদসহ হাওর এলাকার চারপাশের ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাখিরা। আমাদের জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এবং পাখির প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বাংলাদেশে এয়ারগানের আমদানি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো জিনিসই আমদানি হলে উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে তা কেনার সুযোগ থেকেই যায়। কিন্তু আমদানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলে বিক্রির পথটি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে অনেকটাই রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিকূলতায় বেঁচে থাকা বিপন্ন প্রাণীরা।
এয়ারগান দিয়ে শিকারের ফলে চড়ুই, মাছরাঙা, দোয়েল, নীলকণ্ঠ, কুকো, ডাহুক, ছাতারে, কোড়া, হাঁড়িচাচা, সব রকমের শালিক, বসন্ত বৌরি, ঘুঘু, টিয়া, বুলবুলি পাখিসহ বাদুড়, কাঠবিড়ালি, বেজি হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়া বনবিড়াল, তাল খাটাশ, বনো খরগোশ, তিন প্রজাতির গুঁইসাপ ইত্যাদি অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এয়ারগানের প্রভাবেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানান এ বন্যপ্রাণী গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৪