ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

আতঙ্ক নয়, ছড়াচ্ছে সমৃদ্ধির আগুন

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪
আতঙ্ক নয়, ছড়াচ্ছে সমৃদ্ধির আগুন

নোয়াখালীর সুবর্ণচর ঘুরে এসে: রাজপথের আগুন নয়। এ আগুনে পুড়ে ঝলসায় না মানব শরীর।

চারিদিকে ছড়ায় না আতঙ্ক। ভয়ে মানুষ দিগিবিদিগ ছোটে না। এ হচ্ছে ফসলের ক্ষেতে চাষিদের সমৃদ্ধির আগুন। ক্ষেতে ভালো ফসল পাওয়ার প্রচেষ্টার আগুন। আমন ধান উঠে যাওয়ার পর ফসলি ক্ষেতে এমন দৃশ্য অতি সাধারণ চিত্র।

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধানকাটা শেষে আমন ক্ষেতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ধান ক্ষেতের শুকনো খড় পুড়িয়ে শিশু-কিশোরেরা হই-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। খড় পুড়ে ছাই মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে মাঠের পর মাঠ কালচে রূপ ধারণ করে। সাদাচোখে এটাকে শিশু-কিশোরদের আনন্দ হিসেবে দেখা গেলেও আসলে এটা কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে।

ধানকাটা শেষে ক্ষেতের খড় পোড়ানোর এমন দৃশ্য গ্রামগঞ্জে অহরহ চোখে পড়ে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। অনেকে এটাকে শিশু-কিশোরদের আনন্দের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। কিন্তু এটারও যে বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব আছে, এ পদ্ধতি যে ক্ষেতের ফসলের নানামুখী উপকারে আসতে পারে এ বিষয়টিও অনেকের বিবেচনায় নেই।

সূত্র বলছে, ধানকাটার পর ক্ষেতের খড় (নারা) পুড়িয়ে ফেলার সঙ্গে কৃষির উৎপাদনের সম্পর্ক আছে। একই সঙ্গে খড় কাটতে মজুরের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে খড় পোড়া ছাই ক্ষেতে জৈব সারের ঘাটতি মেটায়। চাষিরা নিজে থেকেই এ কৌশল আবিষ্কার করেছে।

ক্ষেতের খড় পোড়ানো সম্পর্কে কথা হচ্ছিল সুবর্ণচরের চর জব্বরের চাষি আলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে সরেজমিনে পেয়ে বললেন, যুগ যুগের প্রচলন হিসেবে চাষিরা ধান কাটার পর ক্ষেতের খড় (নারা) পুড়িয়ে ফেলে। ফলে ক্ষেতের জৈব সারের ঘাটতি পূরণ হয়। এটা চাষিদের নিজস্ব জ্ঞান।  

চর আমানুল্লাহর চাষি মোকসেদ আহমেদ বলেন, আমরা তো অত কিছু জানি না। ধান কাটার পর পরের ফসল ফলানোর সুবিধার্থে ক্ষেতেই খড় পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে আমাদের শ্রম বাঁচে। ধারণা করি ক্ষেতে সারের কিছুটা ঘাটতি পূরণ হয়। এটা আমাদের কেউ শিখিয়ে দেয়নি।

চাষিরা নিজেদের জ্ঞানে খড় পুড়িয়ে ফসলের সমৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। এমনটাই জানা গেল কৃষি দপ্তরের সঙ্গে আলাপচারিতার পর। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এটা চাষিদের জ্ঞান। চাষি থেকে চাষিতে এটা সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে এ বিষয়টি পাঠ্য বইয়েও আছে।

কৃষি পুস্তকের বরাত দিয়ে সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মাটির ভেতরে কিছু কৃমি থাকে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ন্যামাটোড’। এ কৃমি ফসলের শেকড় কেটে ফেলে। ফলে গাছ মারা যায়। এ কারণে এ কৃমি ফসলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তরমুজের ক্ষেতে এটা বেশি দেখা যায়।

ধান ক্ষেতের খড় পুড়িয়ে দিলে ছাই জৈবসার হিসেবে কাজ করবে। এ সার মাটির লবণাক্ততা কমিয়ে দেবে। ধানে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দিলে ক্ষেতের খড় পোড়াতে হবে। এ পোকা গাছের গোড়ার রস চুষে খায়। এরা এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেতের ফসল পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময় ০৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad