নোয়াখালীর সুবর্ণচর ঘুরে এসে: নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উঠেছে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে খুলে যাবে বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার।
অথনৈতিক কাজকর্ম ঘিরে আরও অনেকখানি এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে এলাকাবাসী। তারা ভাবছেন, অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠিত হলে এলাকার বহু দরিদ্র মানুষ কাজের সুযোগ পাবেন। তখন হয়তো সামান্য মজুরিতে ধান কাটার কাজ নিতে হাজারো শ্রমজীবীকে শ্রমের হাটে ঘণ্টার পর ঘ›ণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
সূত্র বলছে, সুবর্ণচরে অর্থনৈতিক জোনের দাবি উঠেছে খুব বেশি দিন হয়নি। সরকারের উচ্চ মহলের ইচ্ছায় এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন থেকে কয়েক দফা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে প্রস্তাব বাস্তবায়নের সমস্যা। অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়নে কিছুটা আইনি জটিলতা আছে। অন্যদিকে কিছু এলাকায় অবৈধ দখলদারদের চিংড়িমহাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সুবর্ণচর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র বলছে, অর্থনৈতিক জোন হিসেবে প্রস্তাবিত মোট জমির মধ্যে ১১ হাজার ৫৪ দশমিক ৬৭ একর জমি চিংড়িমহালের অবৈধ দখলে আছে। এ নিয়ে বেশ কটি মামলা ঝুলছে উচ্চ আদালতে। আইনগত জটিলতা শেষ না হলে এ জমি দখলদারদের কাছ থেকে মুক্ত করা যাচ্ছে না।
অর্থনৈতিক জোনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ মেহেদি হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে সুবর্ণচরে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। এ এলাকার সঙ্গে জেলা শহর ও রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। নিকটবর্তী সোনাপুর এলাকা অবধি গ্যাস ও ট্রেন লাইন আছে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোনের পাশেই আছে নদী। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার যথোপযুক্ত এলাকা এটি।
সুবর্ণচরের স্থানীয় প্রশাসন থেকে সর্বশেষ পাঠানো প্রস্তাবে দেখা গেছে, সুবর্ণচরের চর আলাউদ্দিন, চর আকরাম উদ্দিন, পূর্ব চর মজিদ, পশ্চিম উড়িরচর, উড়িরচর, দক্ষিণ চর মজিদ, কনক গ্রাম, চর নোমান, চর বায়েজিদ, চর খোন্দকার, চর মোজাম্মেল, চর বনানী এবং চর মাকছুমুল হাকিম মৌজার ওপর এ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। জোনের আওতায় মোট জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৬ দশমিক ৫৭ একর। এর মধ্যে চিংড়িমহালের আওতায় থাকা জমি ছাড়াও খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি আছে।
জমির বিবরণ তুলে ধরে প্রস্তাবে বলা হয়, চিংড়িমহালভূক্ত ৪৩টি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করে পুকুর খননের মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছে। এ জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে সংশ্লিষ্টরা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করেন। রিট নিস্পত্তি না হওয়া অবধি জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ আছে।
অন্যদিকে চিংড়িমহালভূক্ত জমি চিংড়ি মহাল হিসেবে বন্দোবস্ত না দিয়ে চিংড়িমহালের ঘোষণা বাতিল করে চরাঞ্চলের ভূমি শুধু ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবি তুলেছে নিজেরা ছাড়াও ৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো আরেকটি রিট আবেদন করেছে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে।
ভূমি অফিস সূত্র বলছে, নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলের ভূমি বাগদা চিংড়িচাষের উপযোগী নয়। এ কারণে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইতিপূর্বে ঘোষিত চিংড়ি মহাল বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে।
অর্থনৈতিক জোনের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রস্তাবিত এলাকায় যোগাযোগের জন্য পাকা সড়ক আছে। এলাকার পাশ দিয়ে মরা মেঘনা নদী প্রবাহিত। তবে এলাকাটি থেকে বহমান মেঘনার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। আর এখান থেকে রেলপথ ও গ্যাসলাইন আছে ৩০ কিলোমিটার দূরে। এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছেনি।
প্রস্তাবিত স্থানকে বন্যামুক্ত উচ্চতায় উন্নীত করতে ৮-১০ ফুট মাটি ভরাটের প্রয়োজন। মৎস্য প্রকল্পের পুকুরগুলো ভরাট করতে ২০ ফুট অবধি মাটি ভরাটের প্রয়োজন হতে পারে। এমনটা জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এলাকার কৃষির সম্ভাবনা বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করেন সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলামের। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে গোটা জেলা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান হবে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এ এলাকায় লবণাক্ততার সমস্যা আছে। সে ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হলে চাষিরা উপকৃত হবে। তারা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাবেন। চাষাবাদের নতুন প্রযুক্তি পৌঁছবে চাষিদের হাতে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় চাষিরা ফসলের ন্যায্য দামও অনেকটাই নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ সময় ০৫১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৪