ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ধানখ্যাত সুবর্ণচরে লোকসানে চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪
ধানখ্যাত সুবর্ণচরে লোকসানে চাষিরা

নোয়াখালীর সুবর্ণচর ঘুরে এসে: দেশের ধান উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চাষিরা লোকসান গুনছেন। ধান আবাদ করে কোনোমতে বছরটা পার করা তাদের পক্ষে এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাম্পার ফলন হলে ধান-চালের বাজার কমে যায়, আবার দাম কিছুটা ভালো পাওয়া গেলে ভালো ফলন ভালো হয় না। বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে যোগ হয়েছে সার-বীজের অপ্রতুলতা,  সেচ সংকট, যথাযথ পরামর্শের অভাব।

সুবর্ণচরের চর আমানুল্লা ইউনিয়নের একটি ছোট্ট বাজার। এলাকার মানুষের কাছে এটি ‘স্বপন মার্কেট’ নামে পরিচিত। এখানে কথা বলার সময় অনেক চাষির ভিড়। শুধু চাষি নয়, সার-কীটনাশক বিক্রেতা, সারের ডিলার, এমন কি ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বারকেও পাওয়া গেলো এখানে। সবার কণ্ঠেই নানামুখি সংকটের কথা। বাংলানিউজের কাছে তাদের অভিযোগ, ধান উৎপাদনে সুবর্ণচরের মাটি অত্যন্ত উর্বর হলেও চাষিদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর নেই।

চর আমানুল্লা, চরক্লার্ক, চর জব্বর, চরবাটা ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা সরেজমিনে ঘুরে বাংলানিউজ জানতে পারে, গোটা উপজেলার চাষিদের মধ্যে অধিকাংশই বর্গা চাষি। নিজের জমি চাষাবাদকারী চাষির সংখ্যা খুব কম। বর্গাচাষিরা মালিকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে চাষ করে। আবাদকালীন সব খরচ বর্গাচাষি নিজেই বহন করেন। কিন্তু উৎপাদনের অর্ধেক জমির মালিককেই দিতে হয়। এর ফলে বর্গাচাষিরা কখনোই লাভবান হতে পারেন না।

চর আমানুল্লা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি নাছিরুল হক প্রতি বছরই লোকসান গুনছেন। তিনি জানালেন, তিন একর জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে দেড় একর জমিতে আবাদ করা সম্ভব হয়নি জলাবদ্ধতার কারণে। পানি সরে যাওয়ার পর আবাদ করলেও ফলন হয়েছে খুবই সামান্য। একদিকে ফসল আবাদে নানামুখি প্রাকৃতিক সমস্যা, অন্যদিকে কৃষি মজুরসহ সার-কীটনাশকের দামও বেড়েছে।

একই গ্রামের বর্গাচাষি জাহাঙ্গীর আলম আমন আবাদ করেছিলেন দশ একর জমিতে। অতিরিক্ত পানি জমে তার প্রায় তিন একরের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ধানে এক ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। ধান পাকার পর ধানগুলো ফুটে যায়। চাষি মো. হাসান নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে একই ধরনের অভিযোগ করেন।         

স্থানীয় সূত্র বলছে, সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয় সুবর্ণচর উপজেলার চর ক্লার্ক, চর আমানুল্লা ইউনিয়নের কিছু অংশে। এইসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রায় ১৫ বছর ধরে। এলাকায় ফসলি জমির ভেতরে প্রবাহিত খালগুলো অনেক আগেই মরে গেছে। অথচ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে আরও প্রায় সাড়ে চারশ’ একর জমিতে আমন আবাদ করা সম্ভব হতো।

অন্যদিকে, এই এলাকায় আবার পানির অভাবেই রবি আবাদ করা সম্ভব হয় না। গোটা উপজেলায় এ সমস্যা রয়েছে। পুকুর কিংবা পানির অন্য কোনো আধার আছে, এমন এলাকায় রবি আবাদ হয়। ধান উঠে গেলে বিশাল উর্বর মাঠ পতিত থাকে। শ্যালো টিউবওয়েল বসিয়ে চর ক্লার্কের কিছু এলাকায় বোরো আবাদ করতে দেখা গেছে। অন্য কোনো এলাকায় এমনটা চোখে পড়ে নি। সেচসুবিধা পেলে গোটা সুবর্ণচরেই এ আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে বলে চাষিদের অভিমত।

কৃষিতে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে কোনো চাষিই ভালোভাবে বলতে পারেন নি। কেউ কেউ আবার অভিযোগ করলেন, চাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, ভর্তুকিসহ কোনো সুবিধাই প্রকৃত চাষিদের কাছে আসে না। আগেই ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়। একজন আবার বলে ওঠেন, ক্ষমতা না থাকলে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। যার কাছে সহায়তা, তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলে কোনো চাষিই সুবিধা পাবে না।  

যথাসময়ে সার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করে চাষিরা জানান, ডিলারের মাধ্যমে সার বিতরণ প্রক্রিয়ায় চাষিদের সময়মত সার পেতে সমস্যা হয়। ডিলার তার সুবিধামত সময়ে সার বিতরণ করে। প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে সার পাওয়ার ব্যবস্থাটুকু করতে পারলে চাষিরা উপকৃত হবে বলে জানালেন তারা।

চাষিরা জানান, বর্তমানে এই এলাকায় একরপ্রতি ধানের ফলন হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ মন। যথাযথ সুবিধা পাওয়া গেলে একর প্রতি ফলন হতে পারে ৭০ থেকে ৭৫ মন। কৃষিতে এ অঞ্চল বিপ্লব ঘটাতে পারে।

সারসহ অন্যান্য সরকারি সুবিধা কৃষকদের কাছে না পৌঁছানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা আবাদি জমি রয়েছে ৩৭ হাজার হেক্টর। সে তুলনায় সারের ডিলারের সংখ্যা কম। এ কারণে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে যথাসময়ে সার পেতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে চাষিদের সব সমস্যা দেখার জন্য ব্লক পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।