ঢাকা: কবি বলেছিলেন, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসেনি কেহ অবনী ’পরে,/ সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ’ অপরের প্রয়োজনে-বিপদে এগিয়ে আসার এ শিক্ষা শৈশব থেকেই মনুষ্য সভ্যতায় দিয়ে আসা হচ্ছে।
অপরের কোনো বিপদ এলে আরেকজন মানুষ নিজের অবস্থান থেকে সেটা মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে কিনা এ নিয়ে অনেক ভিন্নমত থাকতে পারে।
কিন্তু শৈশবে পড়া ‘কবুতর ও পিঁপড়ের গল্পের’ মতো কোনো একটি প্রাণী বিপদে পড়ে গেলে যে তার পাশের প্রাণীটি জীবন বাজি রেখে প্রতিরোধ পড়ে তোলে সেটা আবারও প্রমাণ করলো দু’টি ইঁদুর।
চায়নানিউজ.কম/টাইম.কম’র উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম সিনহুয়ায় প্রকাশিত ২০১৩ সালের সবচেয়ে বিস্ময়কর একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি সবুজরঙা ফণীমনসা সাপ কামড়ে ধরেছে সাদা রঙা একটি মাঝারি আকৃতির ইঁদুরকে। ইঁদুরটির মাথা থেকে গলা পর্যন্ত শরীরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সাপের মুখের মধ্যেও চলে গেছে।
চোখের সামনে শিকারির এমন ভয়ানক আক্রমণে সঙ্গীটি আজীবনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে-এমনটি সহ্য করতে পারবে না বলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সঙ্গীকে বাঁচানোর সিদ্ধান্তই নিলো এতোক্ষণ একইসঙ্গে মাঠ-ঘাট দাপিয়ে ঘোরাঘুরি করা অপর ইঁদুরটি। সর্বশক্তি নিয়ে চেপে বসলো সাপের মাথা ও গলার উপরিভাগ বরাবর!
যেন মনে মনে বলে চলেছে, ‘আমার সঙ্গীকে মুখ থেকে বের করে দাও! নতুবা তোমার গলা থেকে নামছি না। ’
এই অদম্য প্রতিরোধে সাপটি হার মানলে হয়তো দূরের কোনো ঝোপে-ঝাড়ে গিয়ে আবার নিজেদের জগত সাজাবে তারা। ঘুরে বেড়াবে এ মাঠ থেকে ও মাঠ- এ পাড়া থেকে ওপাড়া।
আবার সঙ্গী ইঁদুরকে বাঁচাতে সাপের মাথায় চেপে বসা ইঁদুরটির অতি ক্ষুদ্র দুই পা অথবা শরীরের সামান্য ওজন দীর্ঘকায় সাপটির জন্য কোনো বিপদ নাও হতে পারে! হয়তো মুখের ইঁদুরটির প্রাণ হরণ করে মাথায় চেপে বসা সঙ্গী ইঁদুরটির ওপরই আক্রমণ করে বসবে ফণীমনসা সাপটি!
কিন্তু অপরের তরে এগিয়ে আসার যে শিক্ষা দিয়ে গেলো ইঁদুর দু’টি সেটা-ই-বা ‘অহিংস ও পরোপকারী জগত’ শুধবে কী দিয়ে?
বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৪