ওছখালী, হাতিয়া, নোয়াখালী ঘুরে এসে: তথ্য প্রচার আর স্থানীয় মানুষদের ভাব বিনিময় সমুদ্রোপকূলবর্তী জনগোষ্ঠীকে বিপন্নতা থেকে বাঁচাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা চাষিদের নতুন ফসল আবাদের পথ দেখবে।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকিতে থাকা দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিপদাপন্ন মানুষদের তথ্য নেটওয়ার্কের আওতায় আনতেই এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারিতে বিচ্ছিন্ন এ জনপদে চালু হচ্ছে দেশের ১৫তম কমিউনিটি রেডিও ‘সাগর দ্বীপ’।
দ্বীপের বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষদের কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্তের মধ্যদিয়ে দেশে কমিউনিটি রেডিওর জগতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ‘সাগর দ্বীপ’। হাতিয়া সদর ওছখালী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে নিঝুমদ্বীপে বসেছে রেডিও’র তিনটি টাওয়ার।
ওছখালীতে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রেডিওটির মূল স্টেশনে থাকছে আরও একটি শক্তিশালী টাওয়ার। এর মাধ্যমে দুর্যোগকালে তথ্য বিনিময় হবে। কেন্দ্রের আবহাওয়া বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যাবে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে। বিশেষ সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে মাইকের মাধ্যমে বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।
দুর্যোগকালে ‘সাগর দ্বীপ’-এর তথ্য বিনিময় চালু রাখতে সাহায্য করবে সৌরবিদ্যুতে রিচার্জ হওয়া শক্তিশালী ব্যাটারি। প্রত্যেক টাওয়ারের সঙ্গে সোলার প্যানেল ছাড়াও ব্যাটারি বসানো হয়। এ ব্যাটারি বিদ্যুৎবিহীন কমপক্ষে ১৫ দিন ধরে রেডিওর কার্যক্রম চালিয়ে রাখতে সহায়তা করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানালেন।
কমিউনিটি রেডিও’র বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে এ রেডিও স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ এলাকার বহু মানুষ যথা সময়ে দুর্যোগের বার্তা পান না।
ফলে তাদের পক্ষে দুর্যোগের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আর প্রস্তুতির অভাবে মানুষগুলো নানা ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। এ রেডিও’র মাধ্যমে হাতিয়ার সব মানুষের কাছে দুর্যোগের জরুরি বার্তা পৌঁছানো হবে। ফলে দুর্যোগের ঝুঁকি কমে আসবে।
উদ্যোক্তারা জানালেন, ‘সাগর দ্বীপ’-এর একদল দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন। ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরা গ্রামের পাড়া-মহল্লায় মানুষদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজ করবেন। এরাই আবার গ্রামীণ জনপদের মানুষদের কণ্ঠস্বর তুলে আনবেন রেডিওতে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মোবাইলে পাঠাবেন সংবাদ। এ সংবাদ রেকর্ডিং ও এডিটিংয়ের পর প্রচারিত হবে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। এ সম্পর্কে মতামত দেবেন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। প্রচারিত হবে রেডিওতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, ফলে করণীয়টাই বা কী, সেসব উঠে আসবে রেডিওতে। কৃষিভিত্তিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে চাষিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।
প্রত্যন্ত এলাকার তরুণদের প্রতিভা বিকাশে ভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে এ কমিউনিটি রেডিও। উদ্যোক্তারা মনে করেন, গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তরুণশিল্পী প্রতিভা। এরা নিজেদের বিকাশের কোনো মাধ্যম পাচ্ছেন না। এদের খুঁজে বের করে আরও এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে এ রেডিও। পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের তরুণদের কণ্ঠস্বর তুলে আনবে এ গণমাধ্যম। তরুণদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় দিকনির্দেশনাও থাকবে।
প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের জন্য এ রেডিও’র প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে প্রকল্প পরিচালক তামজিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ রেডিওর মূল লক্ষ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণতা কমিয়ে এনে তথ্য সেবার মাধ্যমে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো। এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফেব্রুয়ারিতেই অনএয়ারে যাবে এ রেডিও।
উপকূল জেলা নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় লোকসংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। তবে ‘সাগর দ্বীপ’-এর লক্ষ্য জনগোষ্ঠী চার লাখ। স্টেশন থেকে চারদিকে ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে এ রেডিও শোনা যাবে। রেডিও স্টেশনের আওতায় আছে পূর্ব-পশ্চিমে মেঘনা নদী, উত্তরে নলচিরা ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে জাহাজমারা ইউনিয়নের কিছু অংশ।
‘কমিউনিটি ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন বাই কমিউনিটি রেডিও’ প্রকল্পের অধীনে এ রেডিওর কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা। আর এতে আর্থিক সহায়তা যোগাবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি-জাইকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৪
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর