ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ভালো আছে আশা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৪
ভালো আছে আশা

আশা ভালোই আছে। দিব্বি খাচ্ছে-দাচ্ছে।

ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। কেউ তাকে বিরক্ত করছে না। নিজের মতো করেই বন-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সে এরই মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছে ছয়টি মাস। কখনো গর্তে। আবার কখনো প্রাকৃতিক জলাশয়ের নিচে নিজের একটা ছোট্ট পৃথিবী বানিয়ে সেখানেই তার নিত্য বসবাস। খোলস পাল্টে বুনোপ্রকৃতির সামনে নিজেকে মেলে ধরার প্রচেষ্টাও রয়েছে তার।

এই কথাগুলো বলছিলাম বাংলাদেশের প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার বসানো ‘আশা’ নামক অজগর সাপ প্রসঙ্গে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরে একটি ছোট ট্রান্সমিটার বসিয়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের স্ত্রী প্রজাতির অজগর আশাকে গত বছরের ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গহিন অরণ্যে অবমুক্ত করা হয়।



এতো গেল আশার পুরনো খবর। ছয় মাস পর তাহলে কেমন আছে আশা? -এ প্রশ্নটি নিয়েই মুখোমুখি হই দেশের প্রখ্যাত সরীসৃপ গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমানের। তিনি এ অজগর গবেষণার প্রধান গবেষক।
বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, গত ছয় মাসে আশা মোট ৩ বার নিজের খোলস পাল্টেছে এবং আশা যে শিকার করে খাবার খাচ্ছে এটারও প্রমাণ পেয়েছি আমরা। যখন সে বড় হতে থাকে তখন তার শরীরের খোলস পাল্টায়। তিনবার খোলস পাল্টানোর ব্যাপারটি থেকেই বোঝাই যায় আশা পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে। এর মাধ্যমেই আমাদের এ গবেষণা কার্যক্রম শতভাগ সফলতার মুখ দেখলো।



তিনি আরও বলেন, তার কাছ থেকে মজার তথ্যও পাচ্ছি আমরা। আগে ধারণা করা হতো যে, শীতকালে অজগর সাপ ‘হাইবারনেশন’-এ (শীতনিদ্রা) চলে যায়। এর মানে হলো,  শীতকালে সাপ গর্তে প্রবেশ করে এবং নিষ্ক্রিয় থাকে। কিন্তু এই তিনটি অগজরের উপর গবেষণা করে আমরা দেখলাম যে, না। এতো দীর্ঘ সময় ওরা গর্তে থাকে না। শীত যখন শুরু হয় তখন ওরা পানিতে থাকে। পানির তাপমাত্রা বাতাসের তাপমাত্রা মতো ঘন ঘন ওঠানামা করে না এবং পানির ভেতরের তাপমাত্রা বাতাসের তাপমাত্রা চেয়ে কিছুটা বেশি থাকে। এর জন্যই ওরা সরাসরি পানিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আশা এখন পানি থেকে উঠে গর্তে প্রবেশ করেছে।

প্রকল্পের জনসংযোগ সমন্বয়কারী রূপা দত্ত বলেন, ‘অজগর একটি উপকারী সরীসৃপ প্রাণী। এদের বিষ নেই। শিকারকে এরা পেঁচিয়ে হত্যা করে গিলে ফেলে। ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে এরা আমাদের ফসলাদির ব্যাপক উপকার করে। বিলুপ্তপ্রায় সরীসৃপ প্রাণী অজগরকে প্রকৃতির মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তার সম্পর্কে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাই মূলত এ গবেষণা অন্যতম উদ্দেশ্য। ক্যারিনাম সংস্থার উদ্যোগে এ অজগর গবেষণা প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করছি।

রেডিও ট্রান্সমিটার সম্পর্কে শাহরীয়ার সিজার রহমান বলেন, ‘আধঘণ্টার একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অজগরের চামড়ার নিচে ট্রান্সমিটারটি বসিয়ে দেওয়া হয়। দু’তিন দিন পর্যবেক্ষণের পর অবমুক্ত করা হয়। অগজরের মোট ওজনের তুলনায় ট্রান্সমিটারের ওজন শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। ট্রান্সমিটারের ওজন ২০ গ্রাম। দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ৩। অনেকটা পেন্সিল ব্যাটারির মত।

তিনি বলেন, ৫শ’ মিটার থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত এই ট্রান্সমিটারের কার্যক্ষমতা। আমাদের হাতে থাকা রেডিওতে ‘বিপ’ ‘বিপ’ ‘বিপ’ এ সংকেতধ্বনি জানান দেবে তার উপস্থিতি। ১৯৭০ সাল থেকে এই ‘রেডিও ট্রেকিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার সাপের উপর গবেষণা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ১০ থেকে ১২টি অজগরের শরীরে এ যন্ত্র স্থাপনের। এরই মধ্যে আরো দু’টি অজগরের শরীরে এ যন্ত্রটি সংযোজন করা হয়েছে।


সংযুক্ত ছবির বক্তব্য:
১ : অবমুক্তর পূর্বে ‘আশা’কে ধরে রেখেছেন গবেষকসহ সংশ্লিষ্টরা।         
ছবি : স্কট ট্রেগেসার
২ : অবমুক্ত’র পর আশা ছুটে যাচ্ছে গহিন বনের দিকে।              
ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
৩ : অবমুক্ত’র জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আশাকে।             
ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন


বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০  ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৪
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।