ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির পাখির সন্ধান

মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির পাখির সন্ধান ছবি: মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ আরও একটি নতুন প্রজাতির পাখি পেলো। আবিষ্কৃত পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Turdus atrogularis এবং ইংরেজিতে এটি Black-throated Thrush নামে পরিচিত।

বাংলায় একে কালোগলা দামা বলা যেতে পারে। ২০১৪ সালের শুরুতেই নতুন প্রজাতির পাখি আবিষ্কার বাংলাদেশের পাখি গবেষকদের জন্য এটি একটি সুসংবাদই বটে।

গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের অভ্যন্তরে এটি প্রথম ক্যামেরাবন্দি করি। সূর্যাস্তের কিছু আগে একটি নালার ধারে খাবারের খোঁজে হেঁটে বেড়ানো অবস্থায় এটি নজরে আসে। ছবি তোলার সময় এটি দামা প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিত হলেও এটি যে বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রজাতি হিসেবে রেকর্ড হবে তা ভাবি নি।

পরবর্তীতে প্রকাশিত পাখির তালিকা অনুসন্ধান করতে গেলে বাংলাদেশের পাখির উপর প্রকাশিত নির্ভরযোগ্য প্রকাশনাসমূহে এ পাখির কোনো তথ্য বা রেকর্ড পাইনি। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখিবিদ ইনাম আল হক ছবি দেখে এটিকে কালোগলা দামা বলে নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশে পাওয়া দামা প্রজাতির পাখির মধ্যে এটি একটি নতুন সংযোজন।

পাখিটি একটি পানির হাউজ থেকে নির্গত নালার পাশের নরম ও স্যাঁতস্যাঁতে মাটির মধ্যে খাদ্যের অনুসন্ধানে ব্যস্ত ছিল। জায়গাটি একটি মূল রাস্তার পাশে। এক পাশে গরুর খামার ও তৎসংলগ্ন চাষ করা বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি ঘাসসমৃদ্ধ তৃণভূমি। অপর পাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ। মাঠের কিনারা ধরে রয়েছে ছোট ছোট গুল্ম-লতা ও ঝোপ-ঝাড়। রাস্তার দু’পাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও অন্য গাছ-গাছড়া। কয়েকটি ছবি তোলার পরেই পাখিটি পাশের ঝোপের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। পাখিটি পুরুষ দামা।

অনুসন্ধান করা তথ্য থেকে জানা যায়, পাখিটি ঠোঁটের আগা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার এবং প্রসারিত অবস্থায় পাখার মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩৮ সেন্টিমিটার হতে পারে। হলদেটে ঠোঁটের গোড়া থেকে বুক পর্যন্ত কালচে পালকের আবরণ রয়েছে। বুক ও পেটের পালক মসৃণ বাদামি হলেও পিঠের পালক সাদাটে বা হালকা বাদামি। পেটের পালকে কালচে ছোপ রয়েছে। লেজ কালচে বাদামি। আচরণ অনেকটা অন্য দামা প্রজাতির মতোই। অমেরুদণ্ডী কীট-পতঙ্গ ও বিভিন্ন ফলের বীজ এরা খেয়ে থাকে। সাধারণত উন্মুক্ত তৃণসমৃদ্ধ স্থান এবং মানুষের আবাসস্থলের আশপাশের বনাঞ্চল এদের পছন্দ।      

কালোগলা দামা বাংলাদেশে পরিযায়ী হিসেবে এসেছে। এই পাখি মূলত ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা। তবে শীতকালে এটি দক্ষিণ মঙ্গোলিয়া ও চীন থেকে শুরু করে তিব্বত, আফগানিস্তান, উত্তর পাকিস্তান, কাশ্মীর ও আসাম হয়ে মায়ানমার পর্যন্ত পরিযায়ী হিসেবে আসে বলে জানা যায়। এই কালোগলা দামা আমাদের দেশে শীতের নবীনতম অতিথি।

লেখক: মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট, যুক্তরাজ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।