ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ছোট্ট খাল, অশান্তি হাজারো চাষির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৪
ছোট্ট খাল, অশান্তি হাজারো চাষির

কোড়ালিয়া (তমরুদ্দি), হাতিয়া, নোয়াখালী থেকে: মেঘনা নদী থেকে উঠে আসা একটি ছোট্ট খাল প্রতি বছর হাজারো চাষির সর্বনাশ ডেকে আনছে। শুকনো মৌসুমে এ খাল দিয়ে আসা লবণ পানি ফসলি ক্ষেতে ঢুকে চাষিদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।



পাকা আমন ধান কাটতে না কাটতেই ক্ষেতে লবণ পানি ঢুকে পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে আমন। আবাদ করা যাচ্ছে না রবি ফসল। ফলে বদলে যাচ্ছে এলাকার কৃষি বৈচিত্র্য।

ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা বলছেন, মেঘনা মোহনায় কাটাখালী খালে একটি স্লুইজগেট নির্মাণ করা হলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। লবণ পানি না ঢুকলে চাষিরা নির্বিঘ্নে সব ফসল আবাদ করতে পারবেন।

চাষাবাদের সুবিধার্থে প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে এখানে একটি বাঁধ দেওয়া হয়। বর্ষায় আবার সে বাঁধ কেটে ফেলা হয়। কিন্তু কবছর ধরে বাঁধ না দেওয়ায় সমস্যা প্রকট।



স্থানীয় বাসিন্দারা এ সমস্যার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গাফিলতিকে দায়ী করেন। তারা মনে করেন, ইউনিয়ন পরিষদ চাইলে অন্য তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ করে বাঁধ দিতে পারেন।

বাঁধের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা সমন্বয় করে নেওয়া যেতে পারে। বিগত বছরগুলোতে বাঁধটি এভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যতিক্রম গত কবছর। এ কারণেই চাষিদের ভোগান্তি বাড়ছে।

এ বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বাবুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ নাকচ করে বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতি বছরই বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রবল জোয়ারে বাঁধ ভেঙে যায়। এলাকায় চাষাবাদের সুবিধার্থে এখানে একটি স্লুইজগেট প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন অন্তত পাঁচ কোটি টাকা। স্লুইজগেট নির্মিত হলে প্রতি বছর অস্থায়ী বাঁধ তৈরির জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান রবি মৌসুমে কাটাখালী খালের তীরবর্তী এলাকার বহু চাষি রবি ফসল আবাদ করতে পারছেন না। অনেক স্থানে আমন ধান কাটা শেষ হওয়ার আগেই ক্ষেতে লবণ পানি ঢুকে গেছে। চাষিরা জানালেন, বার বার লবণ পানি আসায় কৃষি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

হাতিয়া উপজেলা সদর ওছখালী থেকে তমরুদ্দি ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী কাটাখালী খালের মোহনার দিকে যাওয়ার পথে বেজুগালিয়া গ্রামে চোখে পড়ে পাকা ধান ক্ষেতে পানি।

লবণ পানিতে গোড়া পচে যাওয়া একগোছা ধান হাতে তুলে দেখাতে দেখাতে হাজী জালাল আহমেদ বলেন, লবণ পানি সব শেষ করে দিয়েছে। ধানের ফলন কমে গেছে। ধান কাটতে পারছি না। ধানের উৎপাদন ও মাড়াই খরচ বেড়ে গেছে।

বেজুগালিয়া গ্রামের ছাতিরমার বিলে ছয় একর জমিতে আমন ধান করেছিলেন। ধান যা হয়েছে, তাতে অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাবে না। যারা নিজের জমিতে আবাদ করেছে, তারা কিছুটা ফলন পেলেও বর্গা চাষিরা ফলনের অর্ধেক মালিককে দিয়ে দিলে অবশিষ্ট থাকবে না কিছুই। প্রতি বছর জমিতে লবণ পানি ঢুকে জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিচ্ছে।

চাষিরা জানান, লবণ পানির কারণে ধানে চিটা হয়ে যায়। একরে ২৫-৩০ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পাওয়া যায় মাত্র ১৫-২০ মণ। পানির কারণে ধান কাটার খরচও বেড়ে গেছে। এক একর জমির ধান ঘরে তুলতে যেখানে দুই হাজার টাকা লাগতো, সেখানে এখন লাগছে চার হাজার টাকা।

অন্যদিকে লবণ পানি শুকনো মৌসুমে রবি ফসল পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। লবণ আক্রান্ত এলাকায় রবি ফসলের আবাদ কমে গেছে।

এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার ফররুখ আহমেদ (ফারুক) বাংলানিউজকে বলেন, এ খালে এক সময় স্লুইজগেট ছিল। ভাঙনে স্লুইজগেট ভেসে গেছে। এরপর থেকে মানুষের দুর্ভোগ শুরু।

দীর্ঘদিন ধরে খালে বাঁধ দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কবছর বাঁধটি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগ আবার বেড়েছে। স্থায়ী সমাধান না হলে ভবিষ্যতে এলাকার চাষিরা আরও ক্ষতির মুখোমুখি হবেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাটাখালী খাল দিয়ে শুকনো মৌসুমে লবণ পানি ঢুকে আর বর্ষায় জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর ডুবে। এ খালে বাঁধের অভাবে প্রতি বছর কয়েক হাজার হেক্টর জমির কোটি টাকার ফসল ক্ষতির মুখে পড়ছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি চাষির স্বপ্ন ভাঙছে। অন্তত ৩০ হাজার চাষি আছেন বাড়তি ক্ষতির মুখে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন।

তমরুদ্দি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার বোরহানউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ থেকে কাটাখালী খালে একবার কালভার্ট করা হয়। কিন্তু পানির চাপে তা ভেঙে গেছে। চাষিদের সুবিধার্থে পানি উঠানো-নামানোর জন্য এখানে চার গেটের বড় স্লুইজগেট নির্মাণ করা হলে নিত্য এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিট বিশেষজ্ঞেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৪
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad