ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

উজাড় হচ্ছে বন, জনপদে বাড়ছে হুমকি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৪
উজাড় হচ্ছে বন, জনপদে বাড়ছে হুমকি

নিঝুমদ্বীপ, হাতিয়া, নোয়াখালী থেকে: উজাড় হচ্ছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দক্ষিণ উপকূলের বনাঞ্চল। বন বিভাগের আওতাধীন জাহাজমারা, সাগরিয়া ও নলচিরা বিটের সংরক্ষিত বনে ঢুকে পড়ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট।



ফাঁকা হয়ে যাওয়া বনের ভেতর খেলার মাঠ, গবাদিপশুর বিচরণ ক্ষেত্র কিংবা সরকারি প্রকল্প। সুযোগ বুঝে বনের কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। সমুদ্র উপকূলবর্তী ঘন সবুজ সংরক্ষিত বনাঞ্চল এভাবে উজাড় হওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনপদ, জনবসতি।

বুড়িরচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা আমীর হোসেন বলেন, এ বন সাগর পাড়ের মানুষদের বাঁচায়। ঝড়ে বাতাসের ঝাপটা কমিয়ে দেয়। মানুষজন দুর্যোগের বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু গত কবছরে বনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বনের গাছ কেটে সরকারি প্রকল্প করা হয়েছে। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অনেক গাছ মরেও যাচ্ছে।

বন লাগোয়া আলাদি বাজারের মাহে আলম, আবুুল কালাম, দুলালসহ আরও অনেকের আশঙ্কা বন ধ্বংস হয়ে গেলে এ এলাকায় মানুষ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে না। এ এলাকায় আর বসতি থাকবে না। কিন্তু প্রায় ৩০-৩৫ বছরের পুরোনো এ বন রক্ষার উদ্যোগ চোখে পড়ে না। নিজেদের প্রয়োজনে যে যেভাবে পারছে বন ধ্বংস করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরিয়া বিটের কালিরচর এলাকার সংরক্ষিত বন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। বনের এপাশে দাঁড়িয়েই সাগর দেখা যায়। বনের ভেতর দিয়ে সাগরের তীর অবধি হাঁটার পথ তৈরি হয়েছে। এখানে গাছ কাটার দৃশ্য যেমন চোখে পড়ে, তেমনি অনেক গাছ মরেও যাচ্ছে। এ এলাকায় বনের ভেতরে মাছ চাষ ও সবজির বাগানের জন্য ‘ডিসডাইক’ নামের প্রকল্প করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাগরিয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, গাছ মরে বনের অনেক এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। এসব এলাকায় আর গাছের চারা উঠবে না। ‘ডিসডাইক’ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এমন সব স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে বনের কোনো ক্ষতি করছে না।

সমুদ্র পাড়ের এ বনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জোয়ারভাটায় গাছের শ্বাসমূল বেঁচে থাকে। আর তাতেই গাছগুলো সতেজ থাকে। কিন্তু বনের ভেতরে কিছু এলাকায় মাটি চাপা পড়ে গাছের গোড়ার শ্বাসমূল মরে যাচ্ছে। ফলে কিছু গাছ মারা পড়ছে। মানুষের প্রয়োজনে বনের ব্যবহারের ফলেও বনের ক্ষতি হচ্ছে।

জাহাজমারা রেঞ্জের নিঝুম দ্বীপের বন ঘুুরে দেখা যায়, অনেক স্থানে বনের চিহ্ন মাত্র নেই। বনের স্থানে পড়ে আছে ধু ধু মাঠ। কোথাও গবাদিপশু চড়ানো হচ্ছে। আবার কোনো বন এলাকা পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে।

বন্দরটিলা বাজার থেকে নামমার বাজারে যেতে বনের ভেতরে চোখে পড়ে বাড়িঘর। এ এলাকার বন নিয়েও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে বন বিভাগের বিরোধ আছে।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের অভিযোগ বন বিভাগের বিরুদ্ধে। পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়নের বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তিদের বাড়িতে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে বন বিভাগ।

এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাও দেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে জমিতে চাষাবাদ করতে দেওয়া হয় না। চাষাবাদের জন্য বন বিভাগকে একর প্রতি দুই হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। খালে মাছ ধরতে গেলেও টাকা দিতে হয়।

এলাকার চেয়ারম্যানের দাবি, এরশাদ সরকারের আমল থেকে নিঝুমদ্বীপের এ জমিতে ভূমিহীনেরা বসবাস করছে। তাদের নামে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। ভূমি অফিসের কাগজপত্রও আছে প্রত্যেকের কাছে। বন বিভাগ এসব কথা কোনোভাবেই মানতে রাজি নয়।

অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে আবার বন বিভাগের পাল্টা অভিযোগ। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সংরক্ষিত বন নষ্ট করে নিজের লোকদের বসতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সেই লোকেরা বন ধ্বংস করছে। নিঝুমদ্বীপ পুুরোটাই সংরক্ষিত বন। এ বনে বসতি স্থাপন একেবারেই নিষিদ্ধ।

জাহাজমারা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা জাবের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হাতিয়া দ্বীপকে রক্ষায় এ বন অনিবার্য। কিন্তু বিভিন্নভাবে সংরক্ষিত বনে বসতি ঢুকে পড়ায় বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের লোকবল কম থাকায় সামাল দেরয়া যাচ্ছে না। তারপরও বনের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ বন ধ্বংস করার সাহস পায় না। সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী চক্র। নলচিরা বিটের কাজির বাজারের পাশ দিয়ে বনের ভেতর থেকে বালু নিয়ে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ফলে বন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বন। এভাবে ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সংরক্ষিত বনের অধিকাংশ এলাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৪
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।