ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ছড়াচ্ছে রাজনীতির দুর্ভোগ, বাড়ছে পণ্যমূল্য

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩
ছড়াচ্ছে রাজনীতির দুর্ভোগ, বাড়ছে পণ্যমূল্য

বাংলাবাজার (মুছাপুর, কোম্পানীগঞ্জ) নোয়াখালী থেকে: দেশের চলমান সংকটের রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলের প্রত্যন্ত গ্রামেও। কৃষক, জেলে, মজুর, দিনমজুর ছাড়াও সব শ্রেণির মানুষই দিন কাটাচ্ছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।



সবার চোখ এখন হাটে-বাজারের টিভির পর্দায়। কেউ আবার আরও বেশি নির্ভরতা খুঁজতে শুনছেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি আর ভয়েস অব আমেরিকা। আবার কারও ভরসা অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।

দেশজুড়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধের প্রভাবে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের এলাকার স্বাভাবিক জীবন চরম সংকটের মুখে। অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের শহরে নিতে ভোগান্তিও চরম। আমন ধানের ভর মৌসুমে চাষিরা ধানের প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। এ অবস্থায় স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে পেতে সব দলের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি এখন সবার।

কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী, চর ফকিরা, চাপরাশির হাট, বাংলাবাজার, বামনী বাজার, পেশকারহাট, টেকের হাট, নতুন বাজার, রেগুলেটর, গাঙচিল এলাকার যেখানেই পা পড়েছে সব মানুষই সংকট থেকে বের হওয়ার প্রত্যাশায় দিন গুনছে।

বাইরে থেকে আসা অপরিচিত মুখ দেখলে তাদের কাছ থেকে সর্বশেষ খবর জানার আগ্রহটাই সবচেয়ে বেশি। ইতিবাচক খবরের প্রত্যাশা নিয়ে তারা রেডিও-টেলিভিশনের সামনে ভিড় করছেন। প্রধান দুদলের সঙ্গে আলোচনা শুরুর খবর এ প্রান্তের সাধারণ মানুষদের আশান্বিত করে।

সকাল-দুপুর-বিকেল নেই। খবর শুরু হলেই দোকানে দোকানে টেলিভিশনের সামনে উৎকণ্ঠায় মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। যারা সামনের দিকে জায়গা পায় না, তাদের অনেকে দাঁড়িয়ে খবর দেখেন। এক একটি দোকানের সামনে অসংখ্য দর্শকের ভিড় থাকে।

জোড়ায় জোড়ায় অপলক উৎকণ্ঠার চোখ সংকট উত্তরণের পথ খুঁজে বেড়ায়। খবর দেখার সঙ্গে চলে চায়ের আড্ডা। রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে নানা বিতর্ক থাকলেও টেলিভিশনগুলোতে সন্ধ্যা সাতটায় প্রধান খবরের সময়টা দর্শকেরা পিনপতন নীরবতায় থাকেন।

মুছাপুরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের রেগুলেটর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, খেটে খাওয়া মানুষ আমরা শান্তি চাই। রাজনৈতিক প্রধান দলগুলোর সমঝোতার মাধ্যমে অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা।

একই এলাকার ওমর ফারুক মাসুদ বলেন, উপকূলের এ প্রান্তে আমাদের বসবাস হলেও ঢাকার উত্তাপের প্রভাব আছে এখানকার মানুষের জীবনে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ করে গেছে। ফলে মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক। ক্ষতির মুখোমুখি চরাঞ্চালের লাখো মানুষ।

চাপরাশির হাট ও চর এলাহীর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা সরেজমিন বাংলানিউজকে জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। নতুন চাল বাদে সব পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। নতুন ধান ওঠায় স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় বলে চালের দাম তুলনামূলক কম।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাজারে ১০-১৫ টাকার আলু ২০-২৫ টাকা, ৫০-৬০ টাকার পিঁয়াজ ২০০ টাকায়, ২০-২৫ টাকার ফুলকপি ৪০-৪৫ টাকায়, ১৫-২০ টাকার বেগুন ৫৫-৬০ টাকায়, ২০-৩০ টাকার শিম ৬০-৬৫ টাকায়, ৯০-১০০ টাকার সয়াবিন তেল ১৫০ টাকায়, ৬৮-৭০ টাকার ডিজেল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পণ্যের উচ্চমূল্যে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রায় অচল।

চর এলাহীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল আলীম বলেন, দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আসতে পারছে না। প্রয়োজনের তুলনায় মালামাল আসছে যৎসামান্য। পরিবহন খরচও বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। ফলে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ছে হু হু করে।

কোম্পানীগঞ্জ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ বলেন, শীতকালীন সবজির বেশিরভাগ ঢাকা থেকে আসে। কদিন অবরোধ থাকার কারণে গাড়ি আসতে পারছে না। সরবরাহ একেবারেই থমকে গেছে।

এ কারণে ফুলকপি, বেগুন, আলু, সয়বিন তেল ছাড়াও অনেক পণ্যের দাম বাড়তি। মূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর দায় চাপিয়ে কোনো লাভ নেই। ব্যবসাই তো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

চর ফকিরা ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের চাষি রমজান আলী, সাইফুল আলম, আবু তাহের ছাড়াও অনেকে জানালেন, আমনের মৌসুমে নতুন ধান বাইরে পাঠাতে না পারায় ধানের প্রকৃত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য সময় এক মণ ধানের দাম ৭০০-৮০০ টাকা হলেও এখন চাষিদের ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা দরে। ফলে বাড়তি শ্রম আর ঘামে চাষ করা জমির ধান বিক্রিতে চাষিরা নিয়মিত লোকসান গুনছেন।

সরেজমিন ঘুরে জেলা-উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজার অবধি মানুষের চরম দুর্ভোগের চিত্র চোখে পড়ে। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিক্সা-অটোরিক্সা-মোটরবাইক-ভ্যান কিংবা সিএনজিতে যাতায়াত করছে অনেকে।

এদিকে হরতাল-অবরোধের প্রভাবে প্রত্যন্ত এলাকার বহু পথে কোনো যানবাহনই চলাচল করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার কখনো এক পথে গোলযোগ দেখা দিলে অন্যপথে যেতে হচ্ছে দীর্ঘপথ ঘুরে। তাই পথে পথেই বাড়ছে জনদুর্ভোগ, দ্রব্যমূল্য।

বাংলাদেশ সময় ০২৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।