ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকূল থেকে উপকূল

মেঘনাপাড়ে বাংলানিউজে রাতজাগা চোখ

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৩
মেঘনাপাড়ে বাংলানিউজে রাতজাগা চোখ

উপকূল ঘুরে : এখানে রাত জেগে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ শেষ খবরের অপেক্ষা করেন। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মানুষটি থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর পর্যন্ত সবার আগ্রহ তথ্য জানার।

রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোনদিকে, অর্থনীতির হালচাল কী, প্রধান দুই নেত্রী সর্বশেষ কী বললেন, নির্বাচনের পথে এখনও কী কী বাধা আছে--সব খবর চাই তাদের।

রাজধানী থেকে বহু দূরে লক্ষীপুরের কমলনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মেঘনাপাড়ের চরফলকন এভাবেই জেগে থাকে খবরের অপেক্ষায়। সৌর বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাওয়ায় গ্রামের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব চাহিদার সঙ্গে তথ্য জানার অধিকারকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এজন্য ইন্টারনেটে পাওয়া অন্যসব জাতীয় সংবাদ-মাধ্যমের মধ্যে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম গ্রামের পাঠকদের সর্বাধিক পছন্দের। তাই চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের বড় পর্দায় ভেসে ওঠা বাংলানিউজের দিকে দৃষ্টি সবার।

আশ্বিনের দুপুর। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। চরফলকনের ছোট্ট বাজারে দোকানগুলোতে ভিড় কমে গেছে। চরফলকন ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে বাংলানিউজের খবর পড়ে শোনাচ্ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ এন এম আশরাফ উদ্দিন নিজেই। আশপাশে অনেকজনের ভিড়। স্কুলের ছাত্র, চাকরিজীবীসহ গ্রামের শ্রমজীবী মানুষজন শুনছিলেন সে খবর। ল্যাপটপের পর্দায় একসঙ্গে অনেকজনের সংবাদ দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল বলে প্রোজেক্টরের সংযোগে বড় পর্দায় ভেসে উঠলো বাংলানিউজ।

গ্রামবাসী ফজলুল হক বলেন, এক সময় আমরা অন্ধকারে ছিলাম। ঢাকায় কী হচ্ছে কিছুই জানতে পারতাম না। এখন জানতে পারি। রাজনৈতিক উত্তাপ কিংবা অন্য কোনো কারণে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া খবরই এখন ভরসা। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্রে এসে বাংলানিউজ দেখি।
upkul
ইউনিয়ন পরিষদের দোতলার একটি কক্ষে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয় ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর। পুরোমাত্রায় কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে। নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের উদ্যোগে প্রত্যন্ত এই গ্রামকে ইন্টারনেটের মাধমে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ইন্টারনেট সেবা নেয়ার জন্য যে মানুষগুলো একদিন দূরের শহরে যেতেন, তারা এখন সেসব কাজ করতে পারেন এখানে এসে।

ফলকন ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পিছিয়ে থাকা এই গ্রামে বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামবাসীকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। খবরাখবর জানা থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনে এই কেন্দ্র মানুষকে সহায়তা করছে। সংবাদ জানতে মানুষজন এখানে আসেন। খবরাখবর ছাড়াও তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে কৃষকদের জন্য এখানে কৃষি-পরামর্শ দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরীক্ষার সময়সূচি, পরীক্ষার ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তথ্য জানায় তথ্যকেন্দ্র। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য চাকরির খবর ছাড়াও এখানে নানা ধরনের বাণিজ্যিক সেবাও রয়েছে। কেন্দ্রটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

তিনি জানান, গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ভিডিওকলের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ বহু দূরের বিদেশের শহরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন।
upkul
তথ্যকেন্দ্রে আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় এলাকার তরুণ-যুবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। কেন্দ্রে এসে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট করে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে তারা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এই খাতের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিয়মিত কেন্দ্রে আসছে অনেকে। কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আরিফুর রহমানসহ গ্রামের কিছু যুবক বিষয়টিকে দেখছে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে।

চরফলকন গ্রামের যুবক দিদার হোসেন লেখাপড়ার পাশাপাশি তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে দক্ষ হয়ে উঠছেন। নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট চালাতে চালাতে দক্ষতা অর্জন করে ওয়েবসাইট তৈরির প্রযুক্তি আয়ত্ত করে ফেলেছেন। এলাকার শিক্ষার্থীদের নামে কয়েকটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। এ কাজে আয় করেছেন প্রায় ২২ হাজার টাকা। নিজের নামেও রয়েছে ওয়েবসাইট। দিদার জানালেন, ফলকন ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে এসে  তথ্যপ্রযুক্তির কলাকৌশল শিখেছেন।

চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এন এম আশরাফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারনেটের কল্যাণে গোটা বিশ্বের সঙ্গে সার্বক্ষণিকই সংযুক্ত থাকছে প্রত্যন্তের এই চরফলকন। এই কেন্দ্র নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তি দূর করে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। জানতে পারছে সব ধরনের সংবাদ।         

বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০
আরআইএম/জেএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।