ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সিলেটে হাতকরা, সুনামে সাতকরা

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৩
সিলেটে হাতকরা, সুনামে সাতকরা

সিলেট: সাতকরা। ভারতের আসাম এবং সিলেট অঞ্চলের একটি বিশেষ ফল (সাইট্রাস)।

সিলেট ছাড়া দেশের কোথাও এ ফল দেখা যায় না। আসাম ও সিলেটের জৈন্তাপুরে আদিবাসীরা ফলটি ওষুধ, রান্না ও তরকারির স্বাদ বাড়াতে সাতকরার ব্যবহার করে থাকেন।

এখন সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের রসনার অন্যতম অনুষঙ্গ এ সাতকরা। তবে সিলেটে একে ‘হাতকরা’ নামে ডাকা হয়। সিলেটের পরিসীমা ছাড়িয়ে দেশে-বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাতকরা।

টক আর তিতা স্বাদের সংমিশ্রণে ফলটির ঘ্রাণ অনন্য। দেখতে গোলাকার কমলার চেয়ে বড় আকৃতির ফলটির খোসা পুরু আর শাঁস পরিমাণে খুবই কম।

বিখ্যাত সাতকরার খোঁজে অবশেষে গিয়েছিলাম এ ফলের জন্মস্থান বাংলাদেশের সর্ব উত্তরপূর্বের সীমান্ত অঞ্চল সিলেটের জৈন্তাপুর ও আসাম সীমান্তে। কিন্তু জন্মস্থানে নেই সাতকরা। নেই সাতকরার চাষও।

তবে ওই এলাকার কোনো কোনো বাড়িতে দু একটি সাতকরার গাছ দেখা যায়। তবে ফলন ভালো নয়। জৈন্তাপুরের সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রে শুধু সাতকার আছে কয়েক সারি।

এক সময় সাতকরার চাষ হতো সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটের জাফলং বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বড়লেখা, কোম্পানীগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া কমলগঞ্জের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ের টিলায়।

এখন ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। সাতকরা ভৌগলিকভাবে সেমি পাহাড়ী এলাকার ফল। তবে বাংলাদেশে সাতকরার জনপ্রিয়তা আগের চেয়েও এখন অনেক বেড়েছে। সিলেটি প্রবাসীদের কাছে সাতকরার চাহিদা আর সুনাম দুটোই আছে।

সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তের আমদানি সূত্রের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২১৬ মেট্রিক টন সাতকরা আসছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েও সাতকরা আসছে দেশে। সিলেটের প্রতিটি বাজারেই সারা বছর সাতকরা পাওয়া যায়। এখন একহালি সাতকরা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে দেড়শ টাকায়।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটের জাফলং বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বড়লেখা, কোম্পানীগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ প্রভৃতি স্থান ছাড়াও সিলেট অঞ্চলের পাহাড়-টিলায় সাতকরার চাষ হয়।

সাতকরা গাছে ফাল্গুন মাসে ফুল আসে। ফল পরিপক্ব হয় জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে। লেবুগাছের মতো সাতকরার কাঁটাভরা গাছ ২০ থেকে ২৫ ফুট লম্বা হয়। কমলা চাষের মতো নিরবচ্ছিন্ন কোনো চাষপদ্ধতি না থাকায় সাতকরার উৎপাদন সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে নেই।

সাতকরার খোঁজে বেড়িয়েছিলেন সিলেটের এমসি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নেছাওর মিয়া। তিনি গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সাতকরার খোঁজে সিলেটের অনেক জায়গায় ছুটে গিয়েছিলেন।
orange
বিয়ানীবাজারের এক বাড়িতে একটি সাতকরা গাছে বছরে হাজারো সাতকরা ধরে এমন সংবাদে ছুটে যান সেখানে। কিন্তু সেই বাড়িতে সাতকরা গাছ পাওয়া গেলেও ফলন খুবই কম।

এরপর ঘুরেছেন জৈন্তাপুরেও। সেখানেও সাতকরার তেমন চাষ আর দেখতে পাননি। তিনি জানান, সিলেট অঞ্চলে এখন সাতকরার গাছ হাতে গোনা। সাতকরার ওপর তিন বছরের গবেষণা কার্যক্রম শেষে এমসি কলেজের এ অধ্যাপক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।

তিনি সাতকরা সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে বীজ থেকে সাতকরা গাছ হয়। বংশবিস্তারে বীজ খুব কার্যকর নয়। কারণ বীজ থেকে যে গাছ হয় তার ফল আসতে ১৫ থেকে ২০ বছর অবধি সময় লাগে। এর চেয়ে ভালো কলম পদ্ধতি। মূলত শাখা কলমের মাধ্যমে সহজেই এর বংশ বিস্তার হয়।

আবার জাম্বুরার ওপরে কলম করে সাতকরার চারা উৎপাদন করলে তা থেকে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভাল হয়। তবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও সাতকরার গাছ হয়। তবে এর উৎপাদনও খুব কম।

সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সাতকরা গাছে ফুল আসে। আর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে ফল পরিপক্ক হয়। সাতকরা কেটে শুকিয়েও সংরক্ষণ করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৩
এসএ/এসএইচ/এমজেডআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।