ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকূল থেকে উপকূলে

ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ, বিপদের মুখে যাত্রীদের জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৩
ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ, বিপদের মুখে যাত্রীদের জীবন

Rafiqul-islamউপকূল ঘুরে: দিগন্ত রেখায় মিশে থাকা ধু-ধু গ্রামগুলো ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

লক্ষীপুরের আলেকজান্ডার প্রান্তে মেঘনার তীরে বিপন্ন গ্রাম, গাছপালা, বাড়িঘর, ঘাটে বাঁধা নৌকা, সুপারি আর নারিকেল গাছ, লঞ্চঘাটে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকা, সবই চোখে পড়ে।



উপকূলের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে লঞ্চ ভেড়ার আগে ঘাটের দৃশ্য এমনই। ঘাট পেরিয়ে কিছু মানুষ গন্তব্যে নামতে ব্যস্ত, আর কিছু মানুষ অপেক্ষায় থাকেন লঞ্চে উঠতে। অনেক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও যাতায়াতের জন্য এই লঞ্চই ভরসা উপকূলবাসীর। ভোলার দৌলতখান উপজেলা সদর থেকে আসা একতলা লঞ্চ লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ঘাটে ভেড়ার সময় যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্রই চোখে পড়ে।
Upokul-01
উপকূলের বিচ্ছিন্ন জনপদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রীদের যাতায়াতে দুর্ভোগের অন্ত নেই। অনেক স্থানে লঞ্চ ভিড়লেও নেই টার্মিনাল। সেখানে নারী-পুরুষ ও শিশু যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয় কাদাপানি ভেঙে। বর্ষায় এ অঞ্চলের নৌ রুটগুলো থাকে বিপদ-সঙ্কুল। মেঘনা নদী সে সময় আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঝুঁকির কারণে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবছর ১৪ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে।    

আশ্বিনের দুপুর। কাঁটায় কাঁটায় ঠিক বেলা ১১টায় ‘‘এমভি আনন্দপুর’’ লঞ্চটি আলেকজান্ডারের উদ্দেশে দৌলতখান ছেড়ে আসে। দৌলতখানের ভবানীপুরে ‘‘বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাট’’ থেকে মাত্র ৫৩ জন যাত্রী নিয়ে চালক মো. শফিক লঞ্চটি ছেড়ে দেন। উজানে মেঘনার ঢেউয়ের উপর দিয়ে এগিয়ে চলে লঞ্চ। ভাটার টানের বিপরীতে ইঞ্জিনের শক্তিতে লঞ্চের যাত্রা। মেঘনার বুকে তখন ইলিশ শিকারি জেলেদের ব্যস্ত সময় কাটে। চরে মহিষের পাল নিয়ে ছুটে চলে রাখালের দল। মেঘনার দুই পাড়ের সব গ্রামই যেন দিগন্ত রেখায় মিশে যায়।  

অভিযোগ রয়েছে, ছোট লঞ্চের মালিক ও ঘাটের ইজারাদাররা উপকূলের এইসব নৌ রুটে সরকারি নৌ যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তারা কৌশলে ওইসব যানবাহনে যাত্রীদের উঠতে দিত না।

অন্যদিকে, সরকারি সি-ট্রাক কিংবা জাহাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সরকারের খাতায় সব সময় লোকসান দেখাতো। ফলে ওই নৌযানগুলো বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।

দৌলতখান লঞ্চঘাটের টিকেট বিক্রেতা মো. লিটন বলেন, এই ঘাটে এখন আর তেমন যাত্রী যাতায়াত করে না। এক সময় প্রতিদিন ৪-৫শ’ লোক যাতায়াত করলেও এখন সর্বোচ্চ ২শ’ লোকের যাতায়াত আছে। এই ঘাট থেকে সকাল ১১টায় ও বিকেল ৪টায় আলেকজান্ডারের উদ্দেশে দুই বার লঞ্চ যায়। আগে এখান থেকে বোরহানউদ্দিনের মির্জাকালু রুটে লঞ্চ চলাচল করতো। এখন সে রুটও বন্ধ।

অন্যদিকে, এখান থেকে যাত্রী ও মালামাল নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে একটি দোতলা লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

এমভি আনন্দপুর লঞ্চ চলছে আলেকজান্ডারের পথে। মেঘনার বুকে তীব্র বেগে বইছে বাতাস। যাত্রীরা অলস সময় কাটাচ্ছে। কেউ চা-পানি খেয়ে, কেউ আড্ডা দিয়ে, আবার কেউ ঘুমিয়ে সময় পার করছে। যাত্রী কম থাকায় লঞ্চের লম্বা বেঞ্চে ঘুমিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকু অনেকেই হাতছাড়া করেনি। নিচতলায় নারী ও শিশু যাত্রীর সংখ্যা বেশি। কেউবা বসেছে লঞ্চের দোতলায় আপার ক্লাসে। তবে লঞ্চের প্রায় সবটাই ফাঁকা থাকায় লঞ্চের চালক, টিকেট বিক্রেতাসহ অন্য কারও তেমন ব্যস্ততা চোখে পড়লো না।

লঞ্চের চালক মো. শফিক বলেন, লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ঈদ কিংবা বিভিন্ন উৎসবের সময় ২০০ থেকে ৩৫০ যাত্রী ওঠে। স্বাভাবিক সময়ে ৬০-৭০ জনের বেশি ওঠে না। ভাঙনে মেঘনা একদিকে, প্রশস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে, বিভিন্ন স্থানে চর পড়ছে। এ কারণে অনেকটা ঘুরে যেতে হয়। সময় লাগে বেশি।

বেলা পৌনে ২টার দিকে আলেকজান্ডার ঘাটে ভেড়ার একটু আগে প্রবল স্রোতের মুখে পড়ে লঞ্চটি। স্রোতের তোড়ে ভেঙে চলে গ্রামের পর গ্রাম। আলেকজান্ডারের এই লঞ্চঘাটটি এক সময় মেঘনা নদীর মাঝখানে ছিল। এবার এখানকার ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ঘাটে টার্মিনাল থাকলেও ভাঙনে পুরো ঘাটটি এলোমেলো হয়ে গেছে। এ কারণে লঞ্চ থেকে টার্মিনালে নেমে যাত্রীরা অতিকষ্টে কিনারায় ওঠে।

ঘাটে দাঁড়িয়ে বেশকিছু যাত্রী মির্জাকালু ও দৌলতখানের লঞ্চের অপেক্ষা করছিলেন। লঞ্চ ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা দুই লঞ্চে ভাগ হয়ে উঠে গেল। দু’টো লঞ্চই আবারও আলেকজান্ডার ঘাট থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেল। আবার বিরান হয়ে পড়ে ঘাট। ভাঙনের পাশে মেঘনার ঢেউয়ের মুখে পড়ে থাকে টার্মিনালটি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৩
আরআইএম/এসআই/এমজেডআর[email protected]/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।