ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সবুজের মেলায় প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়

আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৩
সবুজের মেলায় প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়

সিলেট: বৃক্ষ উপকারী বন্ধু। তাই, যারা বৃক্ষের মর্ম বোঝেন, তারা শত কাজ আর ব্যস্ততার মধ্যেও ফাঁকফোঁকর খুঁজে ঠিকই হাজির হন বৃক্ষের সান্নিধ্যে।

আর বৃক্ষমেলায় এলে পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃতির সেই সান্নিধ্য। আর সে জন্যই প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় লেগে আছে সিলেট বিভাগীয় বৃক্ষমেলায়।

‘গাছ লাগিয়ে ভরবো এ দেশ, তৈরি করবো সুখের পরিবেশ’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ২১ আগস্ট সিলেট সুরমা নদীর উত্তর পারে ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজের নিচে ২০ দিন ব্যাপী বৃক্ষরোপন অভিযান ও বিভাগীয় বৃক্ষমেলা-২০১৩-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এবারের মেলার আয়োজন নদীর তীরে হওয়ায় গাছের পাশাপাশি হিমেল হাওয়ার স্পর্শ পাচ্ছেন বৃক্ষপ্রেমীরা। ফলে, প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার পাশাপাশি এবং গাছকে আরেকটু একান্তভাবে ভালোবাসার এমন সুযোগ লুফে নিচ্ছেন তারা।

শুক্রবার রাতে বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় বৃক্ষপ্রেমী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই ছিল বিভিন্ন স্টলে। তারা বিভিন্ন নার্সারির স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন। আবার অনেকে যাওয়ার সময় পছন্দের গাছ কিনে নিয়ে যান।

এমসি কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় মেলা ঘুরতে এসে একটি ফলের গাছ কিনেছি। ’

মেলায় সেরা আকর্ষণ নিয়ে আসে বিয়ানীবাজারের বিসমিল্লাহ নার্সারি। এখানে থাইল্যান্ডের ফুজিয়া গাছ দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বৃক্ষ প্রতিকৃতি প্রদর্শিত হয়।

মেলার ৬ ও ৭নং স্টলে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গাছের চারার পাশাপাশি এ প্রতিকৃতিগুলো প্রদর্শিত হয়।

মেলায় ঘুরতে আসা লালদীঘিরপাড়ের ওয়ান ব্যাংকের ক্যাডার অফিসার মোনতাকিম হুসাইন রুম্মান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৃক্ষের মধ্যে বঙ্গবন্ধু, নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি আমার খুব ভালো লেগেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না, মেলায় এ রকম কিছু দেখতে পাবো। ’

মেলায় দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির হাজারো বৃক্ষের সঙ্গে সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে নানা রঙের ফুল ও ফলদ গাছ। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে নতুন মাত্রা যোগ করে বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহণকারী স্টলগুলো। এদের মধ্যে ৭৫ হাজার টাকার বনসাই পাওয়া যাচ্ছিল সিলেট নার্সারিতে।

বাগানের শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে ক্যাকটাস খুব জনপ্রিয়। এদের মধ্যে আবার ‘ড্রাগন ফুডস’ নামের ক্যাকটাসটি অন্যতম। এটিতে সুন্দর ও উজ্জ্বল ফুল ফোটে। এটি লতানো গাছ। উদ্ভিদটি ৩০/৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।   বৃক্ষমেলার বিভিন্ন স্টলে এই ড্রাগন ফুডস বিক্রি হয় একশ ২০ টাকায়।

‘সুগন্ধা নার্সারি’র স্বত্ত্বাধিকারী মনোয়ারা বেগম জানান, ড্রাগন ফুডস ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। ড্রাগন ফুডসে ১৮/২৪ মাসের মধ্যে ফল ধরে। এটি খেতে খুব সুস্বাদু। একটি ড্রাগন দিয়ে ১৫/১৬ গ্লাস শরবত তৈরি করা যায়।

বাগানবাড়ী নার্সারির পরিচালক নুরুল কাদির সিদ্দিকী জানান, বৃক্ষপ্রেমী ও ভেষজ উদ্ভিদপ্রিয় মানুষগুলো ক্যাকটাস কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

১৯৯৪ সাল থেকে বৃক্ষ মেলায় আসছেন আবজল নার্সারির মালিক আবদুল মনাফ। প্রতি বছরই তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করেন। এবারও তিনি ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ নানান জাতের ফলের চারা দিয়ে স্টল সাজিয়েছেন। দাম সহনীয় হওয়ায় ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বৃক্ষমেলায় দেশি-বিদেশি ফলের চারার মধ্যে ফেয়ার, চেরি, মাসুমদা, আবগাডো, রামবুদাম, অল সহিম, ভেরিকাটার, থাই, বারো মাসি, লেবু, কলম্বো লেবু, বাতাবি লেবু, জামির, সাগরকলা, কামরাঙ্গা, চালতা, আমলকি, নাশপাতি, করমচা, পেঁপে, আম, জাম, লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের সব জাতের চারা এসেছে।

ফুলের চারার স্টলেও ভিড় লেগে আছে। প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জাতের ফুলের চারা দিয়ে মেলায় স্টল সাজিয়েছেন লিমন নার্সারির স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল আহাদ।

তিনি জানান, দাম কম এবং ভালো জাতের চারা হওয়ায় ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

মেলায় বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সিলেট কমার্স কলেজের ছাত্র রকিব ও দুলন। তারা বলেন- বৃক্ষমেলায় গাছ কিনতে এসেছিলাম। খুব ভালো লেগেছ। বাসার জন্য দুটি ফলের চারা কিনেছি। দেখি আরো কেনা যায় কিনা।

মেলায় বাগানবাড়ী নার্সারি, গ্রীন সিলেট নার্সারি, সিলেট নার্সারি, সবুজ বন নার্সারি, শামীম নার্সারি, সুগন্ধা নার্সারি, শাপলা নার্সারিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নার্সারি রয়েছে। এসব স্টলে বনজ, ফলদ, ভেষজ এবং শোভাবর্ধনকারী চারা ও গাছ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে, মেলার এক প্রান্তে সিলেট বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দুটি প্রদর্শনী স্টল সাজিয়েছে।

বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনী স্টলে দর্শনার্থীদের জন্য বৃক্ষ রোপনের নানা কৌশল শিখিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেশিয় ফলের প্রদর্শনী করা হচ্ছে।

মেলার আয়োজন নিয়ে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের বিকল্প নেই। তাই, বৃক্ষ রোপনের ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘গাছই একমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে পারবে। আর গাছ রোপনের ব্যাপারে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণে বৃক্ষমেলা অনেক ভূমিকা রাখবে। ’

তিনি গাছ রোপন করার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত গাছ কাটার ব্যাপারেও  সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

২০ দিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে ৯ সেপ্টেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য এ মেলা উন্মুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৩
এএএন/এবি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।