ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে বাগেরহাটে। এতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

পানির প্রবল চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত ১২টার দিকে বাগেরহাটের নদ-নদীগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেশি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোড়লগঞ্জ উপজেলা, বলেশ্বর তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলা, পশুর নদীর তীরবর্তী মোংলা উপজেলা, রামপাল উপজেলা ও বাগেরহাট সদরের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, চিংড়ি ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। ভৈরব নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের বাড়ি ঘর।
ডেইজি বেগম নামে স্থানীয় এক নারী জানান, রাত ২টার দিকে মাঝিডাঙ্গা-বাজনদার বাড়ির মোড় সড়কের ওপর দিয়ে পানি এসে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। এর আগেই সড়কের বিপরীত পাশে থাকা শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর প্লাবিত হয়। পানিতে আমাদের গ্যারেজের চারটি ইজিবাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রান্না করেও খাওয়ার সুযোগ নেই। সেখানেও পানি।

শুধু মাঝিডাঙ্গা নয়, এ উপজেলার চরগ্রাম, ভদ্রপাড়া, সুলতানপুর, ভাঙনপাড়, রহিমাবাদ, ডেমাসহস অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এক রকম পানিবন্দি রয়েছেন।

এদিকে শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজৈর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। ফলে ওই এলাকার ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া একই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগি ও চালিতাতলা এলাকায় রিং বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে অন্তত ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, গোপালকাঠি, মোরেলগঞ্জের শ্রেণীখালি, পঞ্চকরণ, শরণখোলার রাজৈর এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে এবং ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার প্রায় ১৭শ মিটারের বেশি জায়গা থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে বাস্তবিক অর্থে এর পরিমাণ আরও বেশি।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার কয়েক হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামপাল উপজেলার চাষিরা।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা চাকশ্রী গ্রামের চিংড়ি চাষি শেখ নূর ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী ও খালে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে জোয়ারের পানির চাপে ঘেরের বাঁধ ভেঙে প্রায় এক লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে।

ঘের ব্যবসায়ী ডালিম শেখ বলেন, জোয়ারের পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। রাত থেকে আমার ঘেরসহ এখানকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আছে।

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বারইখালি এলাকার আব্দুল্লাহ আল জিমি বলেন, বাতাসে আমাদের বাড়ির গাছগাছালি ভেঙে গেছে। এলাকা পুরো পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার ঘরের ভেতরে প্রায় এক ফুট পানি এবং বাইরে তিন চার ফুট পানিতে তলানো। কাল রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম কিন্তু ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র থেকে চলে এসেছি। রান্নাবান্না না করতে পেরে কাল রাত থেকে এখনো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।

শরণখোলার তাফালবাড়ি এলাকার নাজমুল জানান, গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একটানা বাতাস হচ্ছে। ‌এই বাতাসে আমাদের বেশ কিছু গাছ পড়ে গেছে। আমাদের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।  

তাফালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের একটি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সেখানকার মানুষরা অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তবে এখনো অনেকে নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখনও প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও দুপুরে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এতে এখনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে নদীতে ভাটা এলেও পানি কমছে না। ফলে দুপুরের জোয়ারে আবারও নতুন করে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও দশ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।