ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হুমকির মুখে ব্যাঙের সবচেয়ে বড় আবাসস্থল চবি

সাজিদুল হক সাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১২
হুমকির মুখে ব্যাঙের সবচেয়ে বড় আবাসস্থল চবি

চবি থেকে ফিরে : প্রজণনক্ষেত্র সংরক্ষিত না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বেশি প্রজাতির ব্যাঙের আবাসস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। শীতল রক্তের এ প্রাণিটির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে পারলে এ স্থানটিই হয়ে উঠতে পারে ব্যাঙ গবেষকদের তীর্থভূমি।



সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগ নিলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হতে পারে ব্যাঙের অভয়ারণ্য।

চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৩৫ প্রজাতির ব্যাঙের মধ্যে চবিতেই পাওয়া গেছে ২৫টি প্রজাতি। আরো ২-৩টি প্রজাতি এখনো তালিকাভূক্তির অপেক্ষায়। এক জায়গায় বাংলাদেশের আর কোথাও এত বেশি প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়নি বলে চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্র দাবি করে।

‘বাংলাদেশি ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ’
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চবিতে ‘ফ্যাজারভেরিয়া আসমতি’ নামে আবিষ্কৃত হয়েছে ব্যাঙের নতুন একটি প্রজাতি। যার বাংলা নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘বাংলাদেশি ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ’। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক ছাত্র সাজিদ আলী হাওলাদার এ প্রজাতিটি আবিষ্কার করেছেন। যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। ২০০৬ সালে তাইওয়ানে আবিষ্কৃত ‘তাইপে’ প্রজাতির ব্যাঙের প্রজাতিও চবি ক্যাম্পাসে রয়েছে।

জানা গেছে, চবির কাটাপাহাড় এলাকাতেই বসবাস করে অধিকাংশ প্রজাতির ব্যাঙ। কাটা পাহাড়ের রাস্তার পাশের ড্রেনেই প্রজননস্থল এসব প্রজাতির। তবে অরক্ষিত থাকায় এ জায়গায় ব্যাঙের প্রজণন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফ্যাজারভেরিয়া আসমতি প্রজাতির ব্যাঙটিও পাওয়া গেছে কাটা পাহাড়ের পাশ থেকেই।

ব্যাঙের রাজত্ব কাটাপাহাড় এলাকা
কাটাপাহাড় এলাকাকে ব্যাঙের সুপার সুপার হট স্পট উল্লেখ করে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও ব্যাঙ গবেষক ড. গাজী সৈয়দ আসমত বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সুপার সুপার হটস্পট হচ্ছে কাটাপাহাড় এলাকা । পাহাড়টির তিন-চার জায়গা কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে। তারপরও অধিকাংশ ব্যাঙের প্রজাতি এ পাহাড়ের আশপাশেই পাওয়া গেছে। এ অংশটি সুরক্ষিত হলে নিঃসন্দেহে চবি হতে পারে দেশের প্রধান ব্যাঙ সংরক্ষণাগার। ’

কাটাপাহাড় এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি জানান, অতীতে অপরিকল্পিতভাবে কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে এখানকার পাহাড়। ফলে বালিতে ভরে যাচ্ছে কাটা পাহাড়ের ড্রেন। আর এসব ড্রেন থেকে বালি তোলার ফলে ব্যাঙের প্রজণনস্থলও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। রাতে সিএনজি-প্রাইভেটকারসহ ছোট যানবাহন চলাচলের কারণে চাকায় পিষ্ঠ হয়ে মারাও যাচ্ছে অনেক ব্যাঙ। ছোট ছোট এসব গাড়ির হর্নের কারণেও ব্যাঙের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাটা পাহাড়ের ড্রেনের বালি তুলে ফেলার কারণে পানি জমছে না। এতে করে ব্যাঙের বংশ বিস্তারে সমস্যা হচ্ছে, কারণ ব্যাঙ পানিতে ডিম ছাড়ে। অল্প যেটুকু জায়গায় পানি জমছে সেখানেও ময়লা আবর্জনার কারণে অর্থা‍ৎ বৈরি পিরিবেশের কারণে নিবিংঘ্নে ডিম ছাড়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে পড়ে থাকা ব্যাঙের কারণে তাদের বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে।  

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ জরুরি
ফ্যাজারভেরিয়া আসমতি প্রজাতির ব্যাঙের আবিষ্কারক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাজিদ আলী হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাত্র আধা কিলোমিটার রাস্তায় এতগুলো ব্যাঙের প্রজাতি পাওয়া আসলেই দুর্লভ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ এলাকাকে সংরক্ষণ করা উচিত। ’

ড্রেন থেকে বালি তোলা প্রসঙ্গে সাজিদ বলেন, ‘ব্যাঙের ডিম দেওয়ার সময়টা বাদ দিয়ে অন্য সময় বালি তোলা হলে সমস্যা নেই। বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে বালি না তুললেই ব্যাঙ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারবে। ’

তবে ড্রেনের বালি না তুললে কাটা পাহাড়ের রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন, চবির প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ড্রেনের বালি না তুললে পানি আটকে থাকে। এর ফলে রাস্তার নিচের অংশে পানি জমে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পেলে নির্দিষ্ট সময়ে বালি তোলা বন্ধ রাখা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১২

এসএইচ/ সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।