ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জাতিসংঘের অভিমত বাস্তবায়নের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১২

ঢাকা : যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের অভিমত অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের সদস্যরা।

বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো এক অভিমতে অভিযুক্তদের আইনগত সহযোগিতা এবং সাক্ষ্যগ্রহণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা দেখতে পেয়েছে। বিচারের পূর্বে আটকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।

ট্রাইব্যুনাল আট আসামির মধ্যে ছয়জনকে এক বছরের অধিককাল ধরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটক রেখেছে। এটা সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৯ অনুচ্ছেদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। তারা আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ প্রতিপালন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ’

৬০ দিনের মধ্যে এ অভিমতের জবাব দেয়নি সরকার। এরপর জাতিসংঘ ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানকে এ অভিমত পাঠিয়েছেন বলে জানান ব্যারিস্টার রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের সদস্যরা জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের এই অভিমত বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সরকারের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সরকারের মনে রাখা উচিত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের ওই অভিমত আন্তর্জাতিক আইনের একটি সংকলন। এটা দুঃখজনক যে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল নিবর্তনমূলক আটকের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনাঙ্গনে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকছে। ’

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘সরকার আন্তর্জাতিক আইনের সব স্বীকৃত রীতিনীতি অনুসরণ করে এই পরিস্থিতির পরির্বতন আনবে এবং সে কারণে আমরা জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের অভিমত অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ’  

তিনি যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অভিমত তুলে ধরে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর তাদের মতামতে বলেন, অভিযুক্তদের বিচারকালীন অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আইন বাংলাদেশ কর্তৃক স্বীকৃত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ১৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যা ট্রাইব্যুনালকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ আইনটি সংশোধনীর জন্য ১৪টি সুপারিশ করেছে তারা। ’

‘নিউইয়র্কভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রানজিশনাল জাস্টিজ ২০১১ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বরাবরে এক লিখিত চিঠিতে ১৯৭৩ সালের আইনের সমালোচনা করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ, নির্বতনমূলক আটকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

২০১১ সালের ২১ জুন অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অপরাধের সংজ্ঞায়নের অভাব, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা, সংবিধানের আলোকে আসামি পক্ষের প্রাপ্য মৌলিক অধিকারের অস্বীকৃতি ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ইংলিশ বারের আইনজীবী মাইকেল জে বেলফ ১৯৭৩ সালের আইনের কঠোর সমালোচনা করেন। একই ধরনের সমালোচনা করেছেন ভারত সরকারের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি জে সোরাবাজি। ’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবীর, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময় : ১৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ