ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ধুঁকছে ময়মনসিংহের সুইমিং পুলটি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১১
ধুঁকছে ময়মনসিংহের সুইমিং পুলটি

ময়মনসিংহ: ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ময়মনসিংহের সুইমিং পুল এখন নানা সঙ্কটে ধুঁকছে। পুলটিকে আন্তর্জাতিকমানের বলা হলেও এতে কোনও সাকার মেশিন নেই, ফিল্টারিং সিস্টেম নেই, নেই কোনও হট অ্যান্ড কোল্ড সিস্টেম।



তাছাড়া গ্যালারি না থাকায় অতিথি কিংবা দর্শকদের বসতে হয় মেঝেতে। সীমানা প্রাচীর থাকলেও কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় মাদকসেবী এবং গরু-ছাগলের উৎপাত লেগেই আছেই।
 
ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে সুইমিং পুলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ পায় ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ শেষে তৎকালীন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের কাছে ২০০৮ সালের শুরুর দিকে পুলটি হস্তান্তর করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

তবে সুইমিং পুলটি পুরোদমে চালু হয় ২০০৯ সালে।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির আহম্মেদ চৌধুরী রতন সুইমিং পুলটি বুঝে পেয়ে নির্মাণ কাজে মারাত্মক ত্রুটি দেখতে পান।

পরে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করলে তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে তারাও নির্মাণ কাজের ত্রুটি দেখতে পান।

পরবর্তীতে ওই ঠিকাদারকে দিয়ে ত্রুটি সারানোর জন্য আরও ২৫ লাখ টাকার কাজ করিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির আহম্মেদ চৌধুরী রতন।
 
অভিযোগ রয়েছে, মূলত ওই সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বরাদ্দকৃত অর্থের বেশিরভাগই হাতিয়ে নিয়ে নিম্নমানের কাজ করেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কারণেই নির্মাণ কাজে এ ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে।

সরেজমিনে সুইমিং পুলে গিয়ে দেখা গেছে, সুইমিং পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোচ আছেন একজন। তার অধীনেই প্রায় চারশ‘ শিক্ষার্থী এ সুইমিং পুলে সাঁতার শেখে। এর মধ্যে নিয়মিত রয়েছেন মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন। এদের বেশিরভাগই ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী।

গ্যালারিতে রোদ থেকে বাঁচার জন্য কোনও শেড না থাকায় এসব প্রশিক্ষণার্থীর সঙ্গে আসা অভিভাবকদের মেঝেতে বসে প্রখর খরতাপের মধ্যে সময় কাটাতে হয়।

সেইসঙ্গে সুইমিং পুলটিতে ছেলেরা সাঁতার শেখার সুযোগ পেলেও মেয়েদের এ রকম কোনও সুযোগ নেই।


সাঁতার শিখতে আসা এক প্রশিক্ষণার্থীর অভিভাবক নাজমুন নাহার (৩৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুইমিং পুলে কোনও মহিলা ইনস্ট্রাকটর (প্রশিক্ষক) নেই। থাকলে মেয়েরা এসেও সাঁতার শিখতে পারতো। ’

আরেক অভিভাবক আবুল কাশেম শিকদার বলেন, ‘পুরুষ ইনস্ট্রাকটরও মাত্র একজন। আরও কয়েকজন ইনস্ট্রাকটর থাকলে এখানে প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়তো। ’
 
সুইমিং পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ কাজলও মনে করেন, সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে এ সুইমিং পুল থেকেই বেরিয়ে আসবে দেশের দক্ষ সাঁতারু।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, সুইমিং পুলের জন্য প্রতি মাসে দু’বার যে মেশিনে পানি উত্তোলন করা হয়, তার জন্য মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় ১০ হাজার টাকা। সাকার মেশিন না থাকায় পানিতে সহজেই শ্যাওলা জমে।

ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির আহম্মেদ চৌধুরী রতন জানান, এখন তাদের সবচেয়ে বেশি দরকার সাকার মেশিন। এ মেশিন না থাকায় পানি পরিষ্কার করতে অসুবিধা হচ্ছে।

এদিকে, সুইমিং পুলের সীমানা প্রাচীরের উপর কাঁটা তারের বেড়া না থাকায় এবং প্রবেশপথের পাশেই মিনি গেইটটি অরক্ষিত থাকায় হরহামেশাই মাদকসেবীরা এখানে আড্ডা জমায়।

সেইসঙ্গে গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণে সুইমিং পুল এলাকা পরিণত হয় গো-চারণ ভূমিতে।

বিষয়টি স্বীকার করেন সুইমিং পুলের দায়িত্বে থাকা নৈশপ্রহরী সুলতান আলীও।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ